Thursday 13 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বইমেলায় ‘৩৬ জুলাই’ স্টল

ফারহানা নীলা
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:২৬ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৬

বইমেলায় এসে ‘৩৬ জুলাই’ স্টলেও ঘুরতে যান দর্শনার্থীরা

ঢাকা: ‘পানি লাগবে? পানি?’ আমরা কি কেউ ভুলতে পারব, শহিদ মুগ্ধের এই তিনটি শব্দ। আমরা কি ভুলতে পারব, শহিদ আবু সাঈদের বুক পেতে নেওয়া গুলির দৃশ্য? অধিকার চাওয়ার দিনটিতে রাজাকার বনে যাওয়া সেই সময়গুলোকে আমরা ভুলবো না। আর সেইসব স্মৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করে, ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলায়’ এবার স্থাপন করা হয়েছে, ‘৩৬ জুলাই স্টল’।

সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের বইমেলায় ঢুকেই, হাতের বামে তথ্যকেন্দ্রের পরের স্টলটিই ‘৩৬ জুলাই’। যেখানে গেলে থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয় কিছু সময়ের জন্য। মানুষ যেনো হারিয়ে যায় ২০২৪ এর, জুলাই আগস্টের সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে।

বিজ্ঞাপন

পানির বোতল হাতে নিয়ে শহিদ হওয়া মুগ্ধ’র ছবি

নাহ, বইমেলা বলেই এখানে শুধু বই-ই পাবেন, বিষয়টা কিন্তু তা নয়। ‘৩৬ জুলাই’ স্টলটিতে রয়েছে শহিদদের স্মরণে আঁকা ছবি। রং তুলি দিয়ে পেইন্ট করা ছবিগুলো অশ্রুসিক্ত করে তোলে দর্শনার্থীদের। যেখানে দেখা যায়,পানির বোতল হাতে নিয়ে শহিদ হওয়া মুগ্ধ’র ছবি। লেখা আছে – ‘পানি লাগবে ?’

আর এক পাশে আছে বুক পেতে গুলি চাওয়া রংপুরে শহিদ হওয়া আবু সাঈদের প্রতীকী ছবি। যেখানে লেখা- ‘বুক পেতেছি গুলি কর।’

আবু সাঈদের প্রতীকী ছবি স্থান পেয়েছে সেখানে

সামনেই আছে জুলাই আন্দোলনের মিছিলের প্রতীকী ছবি। যেখানে লেখা- ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার।’

এ ছাড়া লেখা আছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিভিন্ন কর্মসূচির প্রতীকী নাম। যেমন- ১ দফা, লং মার্চ টু ঢাকা, বাংলা ব্লকেড,কমপ্লিট শাট ডাউন, ২৪ এর বিপ্লব ইত্যাদি।

স্টলটিকে একটি ঘরের আদলে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে দর্শনার্থীরা এসে চাইলে ছবিও তুলতে পারেন। বইপ্রেমীরা মেলায় এসে হৃদয়ে জুলাইকে ধারণ করে ক্যামেরা বন্দি করে নিজেকে। এইটুকুই যেনো শান্তনা। ছবি ও লেখাসহ নিজের ফ্রেমবন্দি ছবিটিই শহিদদের প্রতি ভালোবাসা ও অপরাধীদের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ করার প্রতীক বলেই মনে করেন দর্শনার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

গণঅভ্যুত্থানে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ ছিল বাংলা ব্লকেড।

সরেজমিনে দেখা গেল তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়সের মানুষরা এসে ছবি তুলছেন। এমনকি একজন অভিভাবক তার ৪ বছরের সন্তানকে বলছেন, ‘‘দেখো বাবা, এটা মুগ্ধ। ওইযে দেশ স্বাধীনের সময় পানি খাওয়াতো, সেই ভাইয়াটা।’’

সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় ৪ বছরের শিশুকে নিয়ে আসা এই অভিভাবকের। পেশায় শিক্ষক এই অভিভাবক বলেন, ‘এটা শুধু মাত্র একটা স্টলই নয়। জ্ঞান যে শুধু বই থেকেই পাওয়া যায়, তা নয়। এই ছোট্টো একটি স্টল জ্ঞানের ভান্ডার। এখানে ২৪ এর দেশ স্বাধীনের অনেক প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে। যা দেখে আমি আমার সন্তানকে শেখাতে পারছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কি কি ঘটেছিল। কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই, এবারের বইমেলায় এই স্টলটি দেওয়ার জন্য।’

কথা হলো বইমেলায় বই কিনতে আসা স্মৃতি ঘোষের সঙ্গে। ৩৬ জুলাইয়ের স্টলে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন। সারাবাংলা’কে তিনি বলেন, ‘আমি বইমেলা থেকে বই কিনে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এই স্টলটি চোখে পড়ল। দেখে আমার চোখে পানি এসে গেল। আসলে মুগ্ধ, আবু সাঈদ, নাইমা, এদের কারো সঙ্গেতো সরাসরি কখনোও দেখা হয়নি। বাস্তবতার কারণে কারও সেই আন্দোলনে যুক্ত হওয়াও হয়নি আমার। এখানে এই প্রতীকী ছবিগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পেরে আমার অনুভূতিটা এমন হচ্ছে যে আমি ওদের পাশেই আছি। কিংবা স্বাধীন এই বাংলাদেশে আমার সঙ্গে এই শহিদরাও আছে। এ রকম স্টল প্রতিটি বইমেলাতেই যেনো থাকে। প্রতিবছরই যেনো থাকে। সেইটাই চাই আমরা।

স্মৃতি ঘোষের মতো অনেক দর্শনার্থীদেরই চাওয়া এটাই যে প্রতি বছরের বইমেলাতেই যেনো থাকে জুলাইয়ের এই স্মৃতি স্তম্ভ সম্বলিত ‘৩৬ জুলাই’ স্টল। ৫২’র ভাষা আন্দোলনকে যেমন কেউ ভুলে যায় না। ২৪ এর গণআন্দোলনকেও যেনো কেউ ভুলে না যায়। বইমেলার প্রতিটি আয়োজনে যেনো যুক্ত থাকে একুশ ও চব্বিশের আন্দোলন।

সারাবাংলা/এফএন/এইচআই

৩৬ জুলাই অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ বইমেলা ২০২৫

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর