যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন সফরে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং করেন দুই নেতা। এ সময় বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও এই পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন যে, বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনে আমেরিকা বা আমেরিকান ডিপ স্টেটের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এ তথ্য জানিয়েছে।
এক ভারতীয় সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘বাংলাদেশের বিষয়ে আপনার অভিমত কি? এটা স্পষ্ট যে, বাইডেন প্রশাসনের আমলে মার্কিন ডিপ স্টেট বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এমন কী, মুহাম্মদ ইউনূসও জুনিয়র সরোসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি?’
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না। এটা এমন একটি বিষয়, যেটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী (মোদি) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন ও শত শত বছর ধরে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। আমি এটা প্রধানমন্ত্রী মোদির হাতে ছেড়ে দিচ্ছি।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে ভারতের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে মোদি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাব্য সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে আমি সমর্থন জানাই। বৈশ্বিক জনমত বলছে, ভারত এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আমি একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই— ভারতের ভূমিকা নিরপেক্ষ ছিল না, আমরা সব সময়ই শান্তির পক্ষে ছিলাম।’
গণমাধ্যমের উদ্দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব সময় তার নিজের দেশকে অন্য সব কিছু থেকে এগিয়ে রাখেন, যা আমার দৃষ্টিতে একটি প্রশংসনীয় কাজ। আমিও একই কাজ করি—এ বিষয়টিতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এক।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি (মোদি) ভারতে খুবই ভাল কাজ করছেন এবং আমাদের দুইজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে। আমরা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো অব্যাহত রাখব।’
মোদি ট্রাম্পকে তার ‘বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন এবং জানান, তিনিও ট্রাম্পের ‘আমেরিকাকে আবারও মহান রাষ্ট্রে পরিণত কর’ (মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) শ্লোগানের মতো ‘মেইক ইন্ডিয়া গ্রেট এগেইন’ আপ্তবাক্যে বিশ্বাসী।
এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির দশম সফর এবং ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন চতুর্থ সফর। ২০২৪ সালে সর্বশেষ বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্র যান মোদি।
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারতের কাছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ইতোমধ্যে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রয়োজনে পুনরায় এই অনুরোধ পাঠানো হতে পারে। তবে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এটি একটি কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। উপযুক্ত সময়ে তা কার্যকর করা হবে।
প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেই বর্তমানে আছেন তিনি।