Wednesday 12 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদায় নিচ্ছে শীত, প্রকৃতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৪ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৯

প্রকৃতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

রাজশাহী: পৌষ থেকে মাঘ। ষড়ঋতুর একটি শীতকাল। শীত আসলেই কুয়াশা, হিমেল হাওয়া জবুথবু হওয়ার মতো অবস্থা। যদিও শীতের মৌসুমে কয়েকদিন দেখা মিলেছে কুয়াশার। কিন্তু গভীরে মিলেনি শীতের আমেজ। রাজশাহী অঞ্চলেও তুলনামূলকভাবে শীতের দাপট ছিল না বললেই চলে। প্রকৃতির এমন আচরণকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হিসেবে দেখছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা।

পৌষ ও মাঘ মাসকে শীতকাল ধরা হলেও অগ্রহায়ণ থেকেই মোটামুটি শীতের আগমন টের পাওয়া যায়। রেশ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু এবারে রাজশাহীতে একটি শৈত্যপ্রবাহের দেখা মিলেনি। তবে কয়েকদিন তাপমাত্রা নেমেছিল ১০ ডিগ্রির নিচে। বাকি সব দিনে ছিল ১০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা।

বিজ্ঞাপন

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যা থাকার কথা, সেই তুলনায় ২ থেকে ৫৬ ডিগ্রি বেশি থাকছে। এই তাপমাত্রা রাত ও দিন উভয় সময়েই বেশি আছে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে ১৩ ও ১৪ তারিখে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সবশেষ ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে তাপমাত্রা নেমে আসে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটাই ছিল মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

ছবি: সারাবাংলা

আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, ডিসেম্বরের ৮ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৫ থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সবনিম্ন গড় তাপমাত্রা পাওয়া গেছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিজ্ঞাপন

জানুয়ারি মাসের ১ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৮ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৫ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২২ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা পাওয়া গেছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়াও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গড় তাপমাত্রা পাওয়া গেছে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বঙ্গোপসাগরের উষ্ণ দক্ষিণা বাতাসের উপস্থিতির কারণে উত্তরে সেভাবে শীত ছিল না বলে মনে করেন রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের শুরুতে বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণা বাতাসের একটা ফ্লো শুরু হয়। সেটির সঙ্গে মুখোমুখি চাপের কারণে উত্তরে বাতাস ঢুকতে বাধার মুখে পড়েছে। যে কারণে ঠাণ্ডা বাতাস অনুভূত হয়নি। সাধারণত দক্ষিণা বাতাস গরম হয়। আর গরম বাতাসের প্রভাবে উত্তরে বাতাসের শীতলতা অনুভূত হচ্ছে না। তবে এবার গ্রীষ্মকালে আগের তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব রাজশাহী অঞ্চলে শীতকালীন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এই অঞ্চলের কৃষক সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করেছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনি বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আউশ, আমন এবং আলুর ফলনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও বোরো ও গমের ফলনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আমন এবং বোরো ছাড়া সকল ফসলের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বৃষ্টিপাতের ফলে ফলন বৃদ্ধিতে তেমন প্রভাব পড়েনি।

এ ছাড়াও ফসলি জমিতে ধান, আখ এবং ভুট্টার উৎপাদন হ্রাসের প্রবণতা দেখা গেছে। আলু, গম, ডাল ইত্যাদির উৎপাদন বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষণীয়। বিশেষ করে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা এবং বিদ্যমান জল সম্পদের দিক থেকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

সারাবাংলা/ইআ

জলবায়ু পরিবর্তন শীতকাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর