উৎপাদন ব্যয় কমানোর উদ্যোগ
বকেয়া বিল পরিশোধে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাড়ছে ২২ হাজার কোটি টাকা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪০ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪২
ঢাকা: বিদ্যুৎ খাতে বিদ্যমান বকেয়া বিল কমিয়ে আনতে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ভর্তুকি ২২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদ্যুতে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিগত সরকারের ভুল পরিকল্পনা ও ভ্রান্ত নীতির কারণে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক দেনার সৃষ্টি হয়েছে। তিন বছর ধরে নিয়মিত বকেয়া বিল পরিশোধের চাপে আছে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। অর্থ সঙ্কটে থাকায় বিল দিতে পারছে না পিডিবি ও পেট্রোবাংলা। আবার চাহিদামতো ডলার না পাওয়ায় বিদেশি কোম্পানির বিলও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এদিকে আগামী মার্চে গরম পড়া শুরু হতে পারে। তখন বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। ফলে লোড-শেডিংও বাড়তে পারে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ সূত্র মতে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে পিডিবি ও পেট্রোবাংলার বকেয়া বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর বকেয়া জমেছে ৮ কোটি ডলার। পুরোনো বকেয়া ছাড়াও চলতি বছরের বিল পরিশোধে পিডিবি, পেট্রোবাংলা ও বিপিসি মিলে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের চাহিদা দিয়েছে। এর মধ্যে বিপিসি’র চাহিদা ৪২০ কোটি ডলারের বেশি।
অর্থ বিভাগ সূত্র মতে, বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের পরিবর্তে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ ক্রয়ে ইতোপূর্বে সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি এনার্জি অডিট বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ১১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিদ্যুতে ভর্তুকি আরও কমিয়ে আনতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না। তবে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নেমে এলে তখন বিদ্যুৎ ও সারে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০’ বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে দেশিয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং আগামী ২০২৮ সাল নাগাদ গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে নতুন রিগ ক্রয়সহ বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া গভীর সমুদ্রে তেল/গ্যাস অনুসন্ধানে ‘উৎপাদন বন্টন চুক্তি’ (পিএসসি) সম্পাদনে পুনরায় বিডিং রাউন্ড পরিচালনা হবে।
সূত্র জানায়, অন্যান্যের মধ্যে আগামীতে জ্বালানি তেলের সংরক্ষণ ও পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানো এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বৈদ্যুতিক গাড়ি ও যন্ত্র ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে।
সারাবাংলা/আরএস