Wednesday 19 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেলায় নাই সিসিমপুর, জমেনি শিশুচত্বর

আসাদ জামান
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪৪

এবারের অমর একুশে বইমেলার ‘শিশুচত্বর’। ছবি: সারাবাংলা

অমর একুশে বইমেলার ১৬তম দিন সন্ধ্যা নামার একটু আগে শিশু চত্বরে ঢুকে চোখে পড়ল বাংলা একাডেমির ‘দারুণ’ এক বিজ্ঞপ্তি! ‘‘অত্র মঞ্চে আগামী ২১, ২২, ২৮ ফেব্রুয়ারি শিশুপ্রহরে শিশুবান্ধব অনুষ্ঠান বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনুষ্ঠিত হবে। মঞ্চস্থ টেবিল, কার্পেট ও অন্যান্য জিনিসের ব্যবহার একাডেমি কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষের বিষয়।’’

যেটাকে মঞ্চ বলা হচ্ছে, সেটা মূলত, বৃত্তাকার একটা কংক্রিটের বেদী! এই বেদীতে বৃত্তাকারে বসে আড্ডা দেওয়া যায়। কিন্তু, ভেতরে ঢুকে অনুষ্ঠান করা যায়— এটা ভাবানারও অতীত! অধিকন্তু ‘‘মঞ্চস্থ টেবিল, কার্পেট ও অন্যান্য জিনিসের ব্যবহার একাডেমি কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষের বিষয়’’ মর্মে যখন এমবার্গ দেওয়া হয়, তখন আর ভাববার কোনো কারণ নেই যে, এই জায়গাটিতে এসে কোনো শিশু সংগঠন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুষ্ঠান করবে।

বিজ্ঞাপন

এটা মোটামুটি দায়িত্ব নিয়েই বলা যায়, মেলায় আসা এক শতাংশ মানুষও বই কেনে না। কিন্তু, মেলায় আসা ৯০ ভাগ শিশু বই কেনে। অর্থাৎ যারা বাচ্চা নিয়ে বইমেলায় আসেন, তারা বই না কিনে ফিরতে পারেন না। কারণ, বাচ্চাদের আবদার উপেক্ষা করা কঠিন।

বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বইমেলায় বিপুল সংখ্যক শিশুতোষ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাচ্চাদের সুবিধার জন্য মেলায় আলাদা চত্বরও রাখা হয়। ছুটির দিনগুলোর প্রথম প্রহরে ঘোষণা করা হয় ‘শিশুপ্রহর’। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বইমেলার কালীমন্দির গেটসংলগ্ন কোণটিতে ‘শিশুচত্বর’ রাখা হয়েছে। সাধ্য মতো সাজানো হয়েছে শিশুদের উপযোগী করে। তারপরও শিশু চত্বর খুব একটা জমেনি এবার! কিন্তু, কেন?

বিজ্ঞাপন

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শিশু চত্বরের স্টলে কর্মরত বিক্রয়কর্মী ও প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্তদের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোতে শিশু চত্বরে বিপুল সংখ্যক শিশু টেনে আনত ‘সিসিমপুর’। কিন্তু, এবার বইমেলায় নেই সিসিমপুর। এ কারণেই শিশু চত্বরে শিশুদের আনাগোনা কম।

শিশু চত্বরে নেই তাদের আনাগোনা। হয়তো ছুটির দিনগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠবে মেলার এই অংশটুকু। ছবি: সারাবাংলা

শিশু চত্বরে নেই তাদের আনাগোনা। হয়তো ছুটির দিনগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠবে মেলার এই অংশটুকু। ছবি: সারাবাংলা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সি (ইউএসএইড)-এর অর্থায়নে ‘সেসামি স্ট্রিট’-এর বাংলাদেশি সংস্করণ সিসিমপুর। সিসিমপুরের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ‘হালুম’, ছোট দানব আকৃতির মেয়ে ‘ইকরি মিকরি, বিজ্ঞানমনষ্ক-যুক্তিবাদী-গোয়েন্দা শেয়াল ‘শিকু’, দুই বেণীওয়ালা মিশুক প্রকৃতির ছোট্ট মেয়ে ‘টুকটুকি’ ভেড়া জুটি ‘মানিক-রতন’ ‘আর্নিও বার্ট’ এবং বিস্কুট পাগলা মি. গ্রোভারকে দেখতে প্রতিদিনই বইমেলায় শিশুদের ভিড় জমত। শিশুদের জন্য নির্ধারিত শিশু প্রহরগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই মিলত না।

টেলিভিশন পর্দার ‘হালুম’, ‘শিকু’, ‘টুকটুকি’, ‘ইকরি মিকরি’, ‘আর্নিও বাট’, ‘মি: গ্রোভার’-কে সরাসরি দেখার জন্য বইমেলায় হুমরি খেয়ে পড়ত শিশুরা। ফিরে যাওয়ার সময় বায়না ধরত বই কেনার। বাবা-মা’ কিনে দিতেন পছন্দের বই। কিন্তু, এবার আর সেটি হচ্ছে না।

কিন্তু, বিগত বছরগুলোতে থাকলেও এবার কেন বইমেলায় সিসিমপুর নেই? এর কারণ হিসেবে ‘ডাংগুলি’ প্রকাশনীর স্টলকর্মী ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম রিয়ন সারাবাংলাকে বলেন, ‘‘সিসিমপুর ইউএসএইড-এর অর্থায়নে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। ডোনাল্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইউএসএইড-এর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। সে কারণেই হয়তো সিসিমপুর তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখেছে।’’

বিষয়টি জানার জন্য ‘সিসিমপুর’-এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন দিলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আদতেই তাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প ইউএসএইড-এর অর্থায়ন স্থগিত করায় আমাদের ফান্ড বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বইমেলায় সিসিমপুর পাপেট শো করতে পারছি না।’’

‘‘যেহেতু আমরা একটু ঝামেলার মধ্যে আছি, আমাকে কোট করবেন না প্লিজ’’- সারাবাংলাকে বলেন সিসিমপুরের ওই কর্মকর্তা।

অর্থায়ন স্থগিত থাকায় মেলায় আসেনি ‘সিসিমপুর’। কিন্তু, কী কারণে একদিন মাত্র ‘শিশু প্রহর’ হওয়ার পর বন্ধ রাখা হয়েছে মেলার ‘শিশু প্রহর’?— এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন মেলায় স্টল পাওয়া প্রকাশকরা। তাদের অভিযোগ মেলা শুরুর পর প্রথম ছুটির দিন ৭ ফেব্রুয়ারি শিশু প্রহর ছিল। এর পর ৮, ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘শিশু প্রহর’ পাননি তারা। অর্থাৎ এই তিন ছুটির দিন মেলা স্বাভাবিক নিয়মে চলেছে। শিশুদের জন্য আদালাদ প্রহর রাখা হয়নি।

ডেটলের পক্ষ থেকে তৈরি করা কিডস জোন। এখানে শিশুরা কিছুটা হলেও আড্ডা দিচ্ছে। ছবি: সারাবাংলা

ডেটলের পক্ষ থেকে তৈরি করা কিডস জোন। এখানে শিশুরা কিছুটা হলেও আড্ডা দিচ্ছে। ছবি: সারাবাংলা

অবশ্য মেলা শুরুর ২ দিন আগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জানিয়েছিলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা থাকায় ওইদিন কোনো শিশু প্রহর থাকবে না। মেলা শুরু হবে যথারীতি বিকেল ৩টায়। কিন্তু, পরের শুক্রবার ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি কেন শিশু প্রহর ছিল না, এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন প্রকাশকরা।

মেলা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিনটাতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন পড়ে যাওয়ায় শিশু-কিশোরদের নিয়ে মেলায় আসতে চাননি অভিভাবকেরা। আর শবে বরাতের পরের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার ছিল রাত জেগে প্রার্থনা শেষে বিশ্রামের দিন। এ কারণে এই দুইটা ছুটির দিন জমে ওঠেনি শিশু প্রহর। আগামী ২১, ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি এটা পুষিয়ে নিতে পারবেন প্রকাশকরা।

ঝিঙেফুল প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী মো. হানিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘‘মেলায় ‘সিসিমপুর’ নাই, ‘শিশু প্রহর’ শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) একবেলা হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে— এসব কারণে এবার শিশু চত্বরে লোকজন কম। তারপরও যারা এদিকে আসছে, তারা বই টুকটাক বই কিনছে। সাধারণত বাচ্চাদের নিয়ে শিশু চত্বরে এলে বই না কিনে কেউ ফেরে না।’’

ধানমন্ডি থেকে একমাত্র কন্যা মান্নাতকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন আতিকুর রহমান। ডাংগুলি প্রকাশনী থেকে মেয়ের জন্য শেখ সাদীর গল্পের বই কিনে ফিরছিলেন তিনি। এক ফাঁকে কথা হয় আতিকুর রহমানের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘‘সিসিমপুরের চরিত্রগুলোকে সরাসরি দেখার জন্যই আমার মেয়ে মেলায় এসেছিল। এসে দেখি ‘সিসিমপুর’ নাই। ও কিছুটা হতাশ হয়েছে। তবে, বই কিনে দেওয়ার পর ওর চোখে মুখে সেই হতাশা আর দেখা যাচ্ছে না।’’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

বইমেলা ২০২৫ শিশুচত্বর সিসিমপুর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর