১৯ বছরে আহরণ দ্বিগুন হলেও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ইলিশ: মৎস উপদেষ্টা
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৫ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৪
ঢাকা: গত ২০০৬ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত গত ১৯ বছরে ইলিশ মাছ আহরণ ১০৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস ও প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আকতার ।
তিনি বলেন, “নিয়ম মেনে ইলিশ আহরণ বন্ধ, মা ইলিশ সংরক্ষণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতের মতো উদ্যোগের কারণেই ইলিশ আহরণ বেড়েছে। তবে আহরণ বাড়লেও বাজারে ইলিশের দাম অত্যন্ত বেশি। প্রতি কেজি ইলিশের দাম এখনও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে, যা মোটেও কাম্য নয়।”
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
মৎস উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ’ কার্যক্রম গত বছরের ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সফলভাবে পালিত হয়েছে। আশ্বিন মাসের একটি পূর্ণিমা ও একটি অমাবস্যার আগে এবং পরে তিনদিন ধরে আশ্বিন-কার্তিকে মা ইলিশ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই সময়ে সারাদেশে সাগরসহ নদ-নদীতে ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নিষিদ্ধ করে মৎস্য অধিদফতর প্রজ্ঞাপন জারি করে। মৎস্য অধিদফতর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রশাসনসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে নৌ বাহিনী, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড এর সহযোগিতায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের কারণে ২০০৬ সাল থেকে ইলিশের আহরণ ১০৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪ সালের মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার সামগ্রিক প্রজনন সফলতার হার ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৪৪ কোটি জাটকা/রেণু ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৬৬ কোটি বেশি। ২০২৪ সালে প্রতি একক প্রচেষ্টায় ধরা জাটকার পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় দেড় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রজনন সফলতার ইঙ্গিত দেয় এবং পরীক্ষামূলক জালে ৯১ শতাংশ ইলিশ লার্ভি পাওয়া যায়। যা নিষেধাজ্ঞার সময়ে উৎপাদনের সাফল্য নির্দেশ করে। একই সঙ্গে অন্যান্য মাছের লার্ভও উল্লেখযোগ্য হারে পাওয়া গেছে অর্থাৎ জলজ প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা পেয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সামুদ্রিক জলসীমায়ও ইলিশ ও অন্যান্য মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মৎস্য আহরণের ওপর প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সকল প্রকার মৎস্য নৌ যান কর্তৃক যে কোন প্রকার মৎস্য ও চিংড়ি, কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি (ক্রাস্টাশিয়ান্স) আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ার রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু এই সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সমন্বয় না থাকায় বাংলাদেশের মাছ আহরণে পার্শ্ববর্তী দেশের মৎস্যজীবীরা সুযোগ নিচ্ছে। তাই মৎস্য আহরণকারী সংগঠন এবং মৎস্যজীবীগণ কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ব্যান পিরিয়ড সমন্বয় করার দাবি উত্থাপিত হয়ে আসছে।
তারই প্রেক্ষিতে মৎস্য অধিদফতর এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য অংশীজন এবং মৎস্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, ‘ইলিশ মূলত সামুদ্রিক এবং পরিব্রাজনশীল মাছ। প্রজননের জন্য লোনা পানি থেকে স্বাদু পানির নদ-নদীতে পরিব্রাজন করে এবং ডিম ছাড়ে। প্রজনন শেষে পুনরায় সাগরে ফিরে যায়। সারা বছর কম-বেশী ডিম ছাড়ে। তবে অক্টোবর-নভেম্বরের (প্রথম সপ্তাহ) সর্বাধিক প্রজনন হয়। ইলিশ মাছ সাগর থেকে স্বাদু পানির নদ-নদীতে পরিব্রাজনের কারণে নদ-নদীতে সারা বছর পাওয়া যায়। আবার সাগরে বছরের সব সময় ইলিশ পাওয়া যায়। ইলিশের এ ধরনের জীবন চক্রের কারণে সারা বছর আহরিত ইলিশ বাজারে পাওয়া যায় (ইলিশ ধরা বন্ধকালীন সময় ছাড়া)। তবে বাজারে সবচেয়ে কম পাওয়া যায় শীতকালে (ডিসেম্বর- ফেব্রুয়ারি)।’
বর্তমানে ইলিশ আহরণের প্রধান মৌসুম না হওয়ায় বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম। তবে আগামী এপ্রিল থেকে সরবরাহ ক্রমান্বয়ে বাড়বে। যেমন, বরিশালের পোর্ট রোডে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৬-৮ হাজার কেজি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে অথচ প্রধান মৌসুমে (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) দৈনিক গড়ে ৪০-৪৮ হাজার কেজি সরবরাহ হয়ে থাকে।
সারাবাংলা/জেআর/এমপি