Thursday 20 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাই যেন একুশের বইমেলার প্রাণ

ঝর্ণা রায়
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৫ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৮

পুরো বইমেলা জুড়ে জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘হামার বেটাকে মারলু ক্যানে?’, ‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’— জুলাই বিপ্লব নিয়ে এমন অসংখ্য শ্লোগান সম্বলিত পোস্টার দেখা যাবে মেলার প্রবেশ পথেই। শুধু প্রবেশ পথ নয়, জুলাই আন্দোলনের এমন হাওয়া পুরো বইমেলা জুড়ে। স্টলে স্টলে জুলাই অভ্যুত্থান সম্পর্কিত বই মেলায় ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে। ক্রেতারা দেখছেন, কিনছেন আবার ছবি তুলছেন।

অমর একুশে বইমেলা মানেই বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, ভাষার জন্য শহিদের আত্মত্যাগ। তবে সে সবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জুলাই আন্দোলন। ব্যানার, ফেস্টুন, গ্রাফিতিসহ নানা রকম আয়োজনে তুলে ধরা হয়েছে জুলাই আন্দোলনকে। শুধু তা-ই নয়, স্টলগুলোর থিম এবং ‘জুলাই চত্বর’ স্থাপন করে অভ্যুত্থানের চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে নান্দনিকভাবে। আর এসব সজ্জায় রঙ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে লাল, কালো ও সাদা। স্লোগানের পোস্টার, শহিদদের ছবি, দাবি ও অধিকার আদায়ের ফেস্টুন এবং স্বৈরাচারবিরোধী গ্রাফিতি সহজেই দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।

বিজ্ঞাপন

বড় বড় ফেস্টুনে স্থান পেয়েছে জুলাই আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

শুধু ব্যানার, ফেস্টুনেই আটকে নেই জুলাই অভ্যুত্থান। ২৪ অভ্যুত্থান স্থান পেয়েছে বইয়ের পাতায় পাতায়। অন্নি ইসলামের সম্পাদনায় এবারের বইমেলায় এসেছে বই ‘আমার দেখা গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’। মেহেদী হাসান ডালিম লিখেছেন ‘হাইকোর্টের বিতর্কিত রায় ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান’, ফারজানা মাহবুবার লেখা ‘হ্যাশট্যাগ জুলাই’ এবং সাব্বির জাদিদের লেখা ‘একটি গোলাপের জন্য’। এমন অনেক লেখকর বই প্রকাশ হয়েছে এবারের বইমেলায়। ভিন্ন ভিন্ন স্টলে জুলাই অভ্যুত্থান-কেন্দ্রিক বই। ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে এমন তিনটি বই। ‘জুলাই’, ‘ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান’ এবং আসিফ নজরুলের লেখা ‘শেখ হাসিনার পতনকাল’। এই স্টলের বিক্রেতা রোখসানা জানিয়েছেন, অন্য বইয়ের চেয়ে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা বই বেশি বিক্রি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এবারের বইমেলায় অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে স্থান পেয়েছে জুলাই আন্দোলন নিয়ে লেখা বই। ছবি: সারাবাংলা

বই, পোস্টারের পাশাপাশি জুলাইয়ের স্মৃতিকে আরও একবার স্মরণ করার জন্য একুশের বইমেলায় আছে একটি ফটোবুথ। রঙিন স্লোগান অঙ্কিত ফটোবুথটির নাম ‘৩৬ জুলাই’। ফটোবুথের ভেতরে আঁকা হয়েছে দুই হাত প্রসারিত আবু সাঈদের ছবি। সামনে ও দুই পাশে আন্দোলনের সময়কার নানান ঘটনা আঁকা রয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি, পুলিশি নির্যাতন, ছাত্রলীগের হাতে নিগ্রহের মতো ঘটনাও আঁকা হয়েছে সেখানে।

বইমেলায় আসা দর্শনার্থীরা ফটোবুথে এসে ছবি তুলছেন। সন্তানকে ছবি দেখিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা। এমন একজন মো. আবুল কালাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে এসে খুব ভাল লেগেছে। যা ঘটেছে তা ফের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। বাচ্চা জানতে চাচ্ছে, আমি তাকে বলেছি।’

 

মেলায় অংশ নিয়েছে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। সেখানে রক্তাক্ত জুলাই নামে একটি ফটোবুক বের করা হয়েছে। বুকটি বিক্রি করে যে অর্থ আয় হবে তা দিয়ে জুলাইয়ে শহিদ পরিবার ও আহতদের সহযোগিতা করা হবে। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সামনেই রাখা হয়েছে বড় বড় ফেস্টুন। সেখানে জুলাই আগস্টে শহিদ মো. ওয়াসিম আকরুম, আবু সাঈদ, গোলাম নাফিস, মাহামুদুর রহমান সৈকত, শাইখ আশহাবুল ইয়ামিনের ছবি রয়েছে। সেই সঙ্গে শহিদ মুগ্ধর পানির গ্লাস হাতে স্ট্যাচু। তার সামনেই জুলাই চত্বর। সেখানে নানা স্লোগান সম্বলিম পোস্টার মানুষ দেখছেন, ছবি তুলছেন।

‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’। ছবি: সারাবাংলা

এ ছাড়াও আন্দোলনের সময় গুলি ছুড়তে থাকা সন্ত্রাসীর মুখ আঁকা হয়েছে নেকড়ের মতো করে। যেন বীভৎস হত্যাযজ্ঞ আর হিংস্রতার প্রতিরূপ। মেলা ঘুরে মনে হয় জুলাই যেন এবারের অমর একুশে বইমেলার প্রাণ।

সারাবাংলা/জেআর/এইচআই

অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ জুলাই আন্দোলন জুলাই চত্বর বইমেলা ২০২৫

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর