Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম তদন্তে ঘুষের চিত্র তুলে ধরলেন ভুক্তভোগীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৪ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৫

তদন্ত কমিটি ভুক্তভোগীদের লিখিত বক্তব্যও নিয়েছেন

রাজশাহী: রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে ঘুষ আদায়ের অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা পাসপোর্ট অফিসে তাদের হয়রানির চিত্র তুলে ধরেন। পরে তদন্ত কমিটি ভুক্তভোগীদের লিখিত বক্তব্যও নেন।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে রাজশাহী সার্কিট হাউসে বসে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শোনেন।

এ দিন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক একেএম মাজহারুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মঈনুল হোসেন ভুক্তভোগীদের কথা শোনেন। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য লিখে নেন সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর নাজমুল হোসেন। বেলা ১১টা থেকে বক্তব্য নেওয়া শুরু হয়।

এর আগে গত ২০ নভেম্বর পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ আদায়ের অভিযোগে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। পরে ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক (ডিডি) রোজী খন্দকারের সঙ্গে কথা বলতে তার কক্ষে যান। এ সময় তার সঙ্গে ভুক্তভোগীদের উচ্চবাচ্য হয়। এর জের ধরে থানায় অভিযোগ করেন ডিডি রোজী খন্দকার। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে পাসপোর্ট অধিদফতর।

তদন্ত কমিটির সামনে একজন ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘কয়েকমাস আগে তিনি পাসপোর্ট করার জন্য ওই অফিসে যান। তখন শুরুতেই তার ফরমের ভুল ধরে ফেরত পাঠানো হয়। বাধ্য হয়ে তিনি তখন ডিডি রোজী খন্দকারের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু ডিডিও কোনো সমাধান দেননি। বাধ্য হয়ে তিনি একটি মাধ্যমে দুই হাজার টাকা ঘুষ দেন। এরপর ওই ব্যক্তি তাকে সরাসরি ছবি তোলার কক্ষে পাঠিয়ে দেন। তখন ওই আগের ফরমেই তার কাজ হয়ে যায়।’

রাজশাহী মহানগর বিএনপির একজন নেতার ভাতিজা তদন্ত কমিটিকে বলেন, ‘তার চাচার নামে মামলা আছে। পাসপোর্টের আবেদন করার সময় আদালতের অনুমতিপত্রও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরেও তিনমাস ধরে ফাইল আটকে রাখেন ডিডি রোজী খন্দকার। তখন তিনি একটি মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দেন। এর ১৫ দিনের মধ্যে তার চাচার পাসপোর্ট হয়ে যায়।’

বিজ্ঞাপন

একজন ফার্মেসী মালিক তদন্ত কমিটিকে জানান, কয়েকমাস আগে তিনি নিজেই অনলাইনে পাসপোর্টের ফরম পূরণ করেছিলেন। তখন একটি ভুল হয়েছিল। এই ভুলটি ঠিক করতে হলে ডিডি রোজী খন্দকারকেই প্রয়োজন। তিনি একটি আবেদন গ্রহণ করে একদিনেই এটি ঠিক করে দেওয়ার কথা। কিন্তু রোজী খন্দকার সাতদিনেও এটি করে দেননি। তখন তিনিও একটি মাধ্যমে দুই হাজার টাকা ঘুষ দেন। এরপর তার সংশোধন হয়।

ভুক্তভোগী এক সমাজসেবক ছদ্মবেশে তদন্ত কমিটিকে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে হয়রানির চিত্র দেখার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘ফাইল নির্ভুল থাকলেও ভুল দেখিয়ে বার বার ঘুরিয়ে সেবাপ্রত্যাশীকে দালাল ধরতে বাধ্য করা হয়। এখানে সব সমস্যার সমাধান দেন আনসার সদস্যরা। পাসপোর্ট অফিসে দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিলে লাইন লাইনের মতো থাকে, ঘুষ দেওয়া ব্যক্তির কাজ সবার আগে হয়ে যায়। দিনের পর দিন এমন অবস্থায় বিরাজ করছে।’ তিনি দাবি করেন, পাসপোর্ট অফিসে ৯৮ শতাংশ মানুষকে ঘুষ দিয়ে কাজ করতে হয়।

ক্যাবের রাজশাহীর একজন নেতা পাসপোর্ট অফিসের ডিডি রোজী খন্দকারকে ফ্যাসিবাদের দোসর উল্লেখ করে তদন্ত কমিটিকে বলেন, ‘৫ আগস্ট দেশের অনেক কিছুই পরিবর্তন করে দিয়েছে। কিন্তু রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে এখনো ৫ আগস্ট আসেনি। সরকার সারাদেশে ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে শয়তান ধরছে। পাসপোর্ট অফিসের ডিডিকেও আইনের আওতায় আনা দরকার। তাকে শুধু চাকরিচ্যুত করলে হবে না, গ্রেফতার করতে হবে।’

তদন্ত কমিটির কাছে অনেকেই অভিযোগ করেন, ডিডি রোজী খন্দকার সেবাগ্রহীতাদের তার কক্ষে ঢোকার অনুমতি দিতে চান না। দীর্ঘ সময় পর কক্ষে ঢোকার অনুমতি মিললেও ভেতরে বসার সুযোগ থাকে না। অসুস্থ রোগী থেকে শুরু করে সবাইকে ডিডির টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে হয়। আর ডিডি চেয়ার-টেবিলে বসে থাকেন। এভাবে তিনি নাগরিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন। সরকারি অফিসে এটা হতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক একেএম মাজহারুল ইসলাম ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্যও নেন। তিনি জানান, ‘ভুক্তভোগীদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তারা প্রতিবেদন প্রস্তুত করে অধিদফতরে জমা দেবেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

ভুক্তভোগীদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের ডিডি রোজী খন্দকারকে ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।

সারাবাংলা/এইচআই

অনিয়ম রাজশাহী রাজশাহী পাসপোর্ট অফিস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর