Friday 21 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সেচ সংকটে হুমকির মুখে হাওরের বোরো ফসল

আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৬ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৪২

শান্তিগঞ্জ উপজেলার সুরাইয়া বিলের ফসলি জমি।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাওরের কয়েকশ হেক্টর বোরো ফসলি জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে ফেটে গেছে ফসলি জমি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কৃষকদের স্বপ্নের বোরো ফসল। উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের জ্বীবদাড়া বাজারের দক্ষিণের হাওরের জলমহালগুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষক পরিবারগুলো পড়েছেন সেচ সংকটে।

স্থানীয়রা বলছেন, হাওরের জলমহালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরে এই সংকট দেখা দিয়েছে। জলমহালগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে খনন না করলে আগামীতে এই হাওরের ফসলি জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

বিজ্ঞাপন

উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্র কাযার্লয় সূত্র জানায়, উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের উকারগাঁও মৌজার মোট ১৩ দশমিক ৩০ একর জমির সুরাইয়া বিল নামে একটি জলমহাল রয়েছে। ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্র কাযার্লয়ের ৮৯৪ নম্বর স্মারকে জলমহালটি বাংলা বর্ষ অনুযায়ী ১৪৩০ থেকে ১৪৩২ সনের জন্য জ্বীবদাড়া আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড ইজারা পেয়েছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, জ্বীবদাড়া বাজারের দক্ষিণের হাওরজুড়ে কয়েকশত হেক্টর জমিতে বোরো ফসলের মাঠ। সবুজ রঙের ধান গাছগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে বোরো ফসল রোপণ করেছেন কৃষকরা। তবে জমিতে চরম সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। হাওরের মধ্যখানে ‘সুরাইয়া বিল জলমহালটিতে কোনো পানি নাই। সেজন্য বিল আর জমি চেনা বড় দায় হয়ে পড়েছে। হাওরের পলি পড়ে বিলটি ভরাট হয়ে গেছে। তাই জমি ও জলমহাল একই সমান্তরাল হয়ে গেছে। কোথাও পানি নাই, যা পানি ছিল তা, কৃষকরা ব্যবহার করে ফেলেছেন গত কয়েকদিনে।

তবে সুরাইয়া বিল জলমহালের ইজারাদার সমিতির লোকজন কিছু কিছু জায়গায় নিজ উদ্যোগে খনন করে ডোবা তৈরি করছেন, তবে সেটিও খুব সীমিত। জলমহালটিতে বিগত বছরে সমিতির লোকজন যে কয়েকটি ডোবা তৈরি করেছিলেন তার অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। আর যেগুলোতে কিছুটা পানি ছিল, সেগুলোও শুকিয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

হাওরের কৃষক মো. এনামুল হক জানান, এই হাওরের আমার অনেক জমি আছে, অনেক ব্যয় করে জমিগুলো চাষাবাদ করেছি। এখন হাওরে চরম সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। হাওরের সুরাইয়া বিল জলমহালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমাদের এমন দুভোর্গের সৃষ্টি হয়েছে। কৃষিজমি বাঁচাতে সুরাইয়া বিল জলমহালটি খনন করতে হবে।

তিনি বলেন, বিলের ইজারাদাররাও প্রতি বছর খনন করেন, তবে এটি খুবই সামান্য। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপকভাবে এই জলমহাল খনন করা হলে, একদিকে কৃষি জমিও বাঁচবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

জ্বীবদাড়া গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া জানান, জলমহালটি ভরাট হয়ে আমাদের জমি আর বিল সমান্তরাল হয়ে গেছে। এই বছর বৃষ্টি না হলে রোপণ করা ফসল ঘরে তোলা অনিশ্চিত হবে। হাওরের এই জলমহাল খনন করা হলে, জমিতে ধান ফলাতে পারব। আর তা না হলে আগামীতে এই হাওরের সব জমিই অনাবাদি থেকে যাবে। গ্রামের লোকজন এই বিল ইজারা নিয়েছেন, ভরাট হওয়ার কারণে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন, বিল খনন করলে সরকার ও কৃষকের লাভ হবে। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে,আর কৃষকরা সোনালী ফসল ফলাতে পারবেন। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, জলমহাল যেন দ্রুত খনন করা হয়।

সুরাইয়া বিল জলমহালের ইজারাদার জ্বীবদাড়া আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সাজিরুল ইসলাম জানান, বোরো মৌসুমের শুরুতেই হাওরের কৃষকরা বিলের পানি দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। কিন্তু জলমহালটি একেবারেই ভরাট হয়ে গেছে। প্রতি বছরই নিজেদের অর্থায়নে বিলের কিছু কিছু অংশ খনন করে ডোবা তৈরি করা হয়। কিন্তু এটায় কুলায় না। বৃহৎভাবে জলমহাল খনন করা প্রয়োজন। বিলটি ইজারা নিয়ে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। খনন করলে সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়বে। বিলেও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ থাকবে। কৃষরাও ফসলি জমিতে চাষাবাদ করতে পারবেন।

চলতি বছরেও বিলটিতে পানি ধরে রাখার জন্য সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব টাকায় সীমানায় একটি বাঁধ নিমার্ণ করছেন বলেও জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, এই হাওরের জমিতে প্রচুর পরিমাণে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। তবে এখানে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অবহিত করব। সেই সঙ্গে সেচ সংকট নিরসনে বিএডিসিকেও অবগত করব। লক্ষ্যমাত্র অজর্ন নির্বিঘ্নে বোরো চাষাবাদ অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুকান্ত সাহা জানান, বিলটি ভরাট হওয়ার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ লিখিত আবেদন করনেনি।

তিনি বলেন, প্রতিটি জলমহালই খনন করা প্রয়োজন। এলাকার লোকজন বিলটি খননের জন্য আবেদন করলে ,আমরা তা যাচাই বাছাই করে খননের জন্য অনুমতি দিতে পারব অথবা কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে সেটি খনন করাতে পারব। সবার আগে কৃষিকে বাঁচাতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারও খুবই আন্তরিক।

সারাবাংলা/ইআ

ফসলি জমি বোরো চাষ সুনামগঞ্জ সেচ সংকট হাওরের পানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর