Wednesday 25 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজলো বইমেলা

আহমেদ জামান শিমুল
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩১

বৃষ্টিতে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ ও খাবারের দোকানে আশ্রয় নেয় দর্শনার্থীরা। ছবি: সারাবাংলা

‘কেমন বৃষ্টি ঝরে-মধুর বৃষ্টি ঝরে-ঘাসে যে বৃষ্টি ঝরে-রোদে যে বৃষ্টি ঝরে আজ,’—লিখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। বহু কবির হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত করেছে এ বৃষ্টি। কবি কালিদাস থেকে বিদ্যাপতি, মধ্যযুগের চণ্ডদাস, রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল মধুসূদন, কাজী নজরুল, জীবনানন্দ দাশ, জসীম উদ্দীন কিংবা শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ—কার কবিতায় স্থান পায়নি বৃষ্টি। তারা ভিন্ন ব্যঞ্জনায়, সুরে বর্ণনা করেছেন বৃষ্টি পরবর্তী প্রকৃতির রূপ।

প্রকৃতির সে নরম, মোলায়েম সৌন্দর্য এসেছিল বইমেলায়। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার পরে এক পলকের জন্য এসেছিলো বৃষ্টি। হঠাৎ নামা সে বৃষ্টি মেলায় আসা মানুষকে দিয়েছে স্বস্তি। মেলা প্রাঙ্গন ঝুড়ে থাকা ধুলার রাজত্ব ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল। মানুষ নিতে পেরেছিল প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন স্টলে আশ্রয় নিয়েছিল দর্শনার্থীরা। ছবি: সারাবাংলা

সূর্য ডোবার পর থেকে ঈশান কোণে কালো মেঘ জমছিল। গরম বাতাস একটু একটু করে ঠাণ্ডা হচ্ছিল। মেলা উপস্থিত জানতা ভাবছিল, একটু পরেই নামবে অঝোর ধারা। কাজী নজরুলের কবিতার মতো ‘অঝোর ধারায় বর্ষা ঝরে সঘন তিমির রাতে’—এমন অবস্থাও হয়নি। বৃষ্টি নেমেছিল ক্ষণিকের জন্য। তাই তো জনতাকে খুব বেশি হুড়োহুড়ি করতে হয়নি। খুব সহজেই তারা বড় বড় স্টল কিংবা প্যাভিলয়নে আশ্রয় নিতে পেরেছেন।

বৃষ্টি থেকে বই বাঁচানোর চেষ্টা। ছবি: সারাবাংলা

ফোঁটায় ফোঁটায় যখন বৃষ্টির পানি পড়ছিল, তখন স্টলকর্মীরা তেরফেল, প্ল্যাস্টিক দিয়ে ডেকে দিচ্ছিলেন বই। যাদের কাছে কিছুই ছিল না, তারা দ্রুততার সঙ্গে বইগুলো ডিসপ্লে থেকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন।

চানাচুরওলার বিক্রি বেশ বেড়েছিল। ছবি: সারাবাংলা

এ সময় স্টলগুলোতে বেচা-বিক্রি বন্ধ থাকলেও, ব্যতিক্রম ছিল মেলায় আসা হকাররা। তারা ঠিকই বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেওয়া মানুষদের মধ্যে ভিড়ে গিয়ে তাদের ঝালমুড়ি, ফুচকা, চকলেট বিক্রি অব্যাহত রেখেছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনের মাঝের রাস্তায় বসা দোকানগুলো সরিয়ে নিয়েছিলো মেট্রোর পিলারের নিচে। সেখানেও জমেছিল বেচাবিক্রি। মেলার ভিতরের আড্ডাগুলো চলে এসেছিলো এসব দোকানে।

ভিজে ঠাণ্ডা লাগার ভয়ে সবাই যখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিল, তখন কিছু যুগল সেসব উপেক্ষা করে হাতে হাত ধরে মেলা প্রাঙ্গনে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। তাদের হৃদয়ে হয়তো তখন বাজছিল কোনো প্রেমের কবিতা।

অন্যপ্রকাশের পরিচালক সিরাজুল কবির স্মরণ করলেন কয়েক বছর আগে বৃষ্টির কারণে বই ভিজে যাওয়ার ঘটনা। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি আসলে আমরা আসলে একটু ভয়েই থাকি। যদিও আমাদের সকলপ্রকার প্রস্তুতি নেওয়া থাকে। তারপরও প্রকৃতির ওপর তো কারো হাত থাকে না। মুষল ধারে কিংবা ঝড়ো বৃষ্টি হলে তো বিপদে পড়ে যাবো।’

প্লাস্টিক দিয়ে বই ঢেকে দিচ্ছেন স্টলকর্মী। ছবি: সারাবাংলা

১৫ মিনিটের মত স্থায়ী বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর মেলা প্রাঙ্গন অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। বেশিরভাগ দর্শনার্থী পুনরায় বৃষ্টি নামার শংকায় দ্রুত বাড়ির পথে রওনা দেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল বলছিলেন, ‘ইচ্ছে ছিল মেলায় আরও কিছুক্ষণ থাকবো। কিন্তু বৃষ্টি যেহেতু নামছে তাই ফিরতে হচ্ছে। কারণ আমাকে যেতে হবে যাত্রাবাড়ী। আবার বৃষ্টি আসলে গাড়ি পাবো না। তখন বেশ বিপদে পড়তে হবে।’

তবে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে অনেক দর্শনার্থী থেকে গেছেন মেলায়। মিরপুর-৬ থেকে আগত ব্যবসায়ী সাব্বির বলেন, ‘যতক্ষণ না সব স্টল বন্ধ হচ্ছে ততক্ষণ আমি মেলায় আছি। আমার কিছু প্রিয় লেখককের বই কেনা এখনো বাকি, সেগুলো কেনা শেষ হলে ফেরার চিন্তা করবো।’

সারাবাংলা/এজেডএস

বইমেলা ২০২৫ ভিজলো বইমেলা হঠাৎ বৃষ্টি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর