Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

থমথমে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৩ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:১০

ক্লাশ-পরীক্ষা বন্ধ আছে কুয়েটে।

খুলনা:  খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই রাতেই শিক্ষার্থীদের এক লিখিত প্রেসব্রিফিংয়ে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার মধ্যে দাবিসমূহ পূরণের আল্টিমেটাম দিয়ে দাবি পূরণ না হলে কুয়েটে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

এ ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদলের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পালটা পালটি ধাওয়ার ঘটনায় বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

এদিন কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি কুয়েটে। ক্যাম্পাসের গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কিছু শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল ছাড়তে দেখা গেছে।

ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারের সামনে অবস্থান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

মেডিকেল সেন্টারের দোতলায় ভিসি অবরুদ্ধ রয়েছেন বলে জানা গেছে। দুপুর দেড়টায় কুয়েটের ভিসি’র পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি পুরণ না হওয়ায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

সব মিলিয়ে বুধবার দুপুর পর্যন্ত পুরোপুরি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে কুয়েটে।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে- ১. খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষা, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অধীনস্থ সকলে কুয়েটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা অবস্থায়, কুয়েটের ভিতরে ও বাইরে, কোনো প্রকার রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবে না- উল্লেখ করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে শাস্তি হিসেবে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য আজীবন বহিষ্কার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রত্ব বাতিল বিষয়টি স্পষ্টভাবে উক্ত অধ্যাদেশে উল্লেখ করতে হবে।

২. আজ কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থী এবং এদেরকে প্রশ্রয়দাতা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কুয়েট প্রশাসন হতে হত্যার চেষ্টা ও নাশকতার মামলা করতে হবে। এ ছাড়া, হামলায় জড়িত সকলকে বহিষ্কার এবং ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। জড়িতদের তালিকা শিক্ষার্থীরা প্রদান করবে।

বিজ্ঞাপন

৩. আগামী ২৮ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে কুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরে পর্যাপ্ত সংখ্যক সামরিক বাহিনীর সদস্যের দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. আজকের ঘটনায় আহত সকলের চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়ভার কুয়েট প্রশাসন থেকে বহন করতে হবে। আহতদের তালিকা শিক্ষার্থীদের থেকে প্রদান করা হবে।

৫. এসব দাবি পূরণ করে আজকের ঘটনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক পদত্যাগ করতে হবে।

কুয়েটে সংঘর্ষের বিষয়ে খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ‘কুয়েটের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি। ক্যাম্পাসের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

বুধবার দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (নর্থ) মো. নাজমুল হাসান রাজীব বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় গতরাতে ৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। তবে এখনও কোনো মামলা হয়নি। ক্যাম্পাসের গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে ক্যাম্পাসের বাইরে দুপুর ১২টায় খুলনার শিববাড়ি মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল। এরপর খুলনা প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে তারা।

জানা যায়, মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে খুলনা মহানগরের রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়।

এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে আহতদের বেশিরভাগকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। তাদের কুয়েট মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে কুয়েটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয় শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং ক্যাম্পাসের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে কুয়েট পকেট গেটের বাইরে বিএনপি সমর্থিত বহিরাগতরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ক্যাম্পাসের ভেতর ফেলে দেয়। এরপর থেকে সাধারণ ছাত্রদের ভেতর চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সংঘর্ষের সময় অনেকের হাতে রামদা ও দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

অপরদিকে কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাত ৯টায় শিববাড়ি মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি, খুলনা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা মহানগর ও জেলা কমিটি। একইস্থানে অবস্থান নেয় বিএনপির নেতারাও। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

ওই রাতে বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রদলের সদস্য ফরম বিতরণকালে ছাত্রশিবিরের হামলায় ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে খুলনা বিএনপি নেতারা।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ছাত্রশিবির খুলনাকে উত্তপ্ত করার জন্য ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অতর্কিত হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের মারাত্মক আহত করেছে। ছাত্রশিবির নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার না করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যানারে তারা নগরীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে- যা মোটেই সর্মথনযোগ্য নয়। ছাত্রশিবির শান্তিপূর্ণ খুলনাকে অশান্ত করতে চায়। অবিলম্বে হামলাকারী শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে।

বিবৃতিদাতারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাড. শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবু প্রমুখ।

কুয়েট-এর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বর থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা প্রদক্ষিণ করে।

বিক্ষোভ মিছিলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, কুয়েটে যখন রক্ত ঝরে আবরার তোমায় মনে পড়ে’ ,’আবু সাঈদ মুগ্ধ ,শেষ হয়নি যুদ্ধ’,’সন্ত্রাসীদের চামড়া,তুলে নেব আমরা’,’সন্ত্রাসীদের হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘সন্ত্রাসীদের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিব না’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, বাংলাদেশে হবে না’। এ সময় শিক্ষার্থীরা কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন।

এদিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে অবস্থান নেওয়া খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় যুবদলের দফতর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেলের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাদের কোন অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নিবে না। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে, ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনায় কুয়েটের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ও সোহেল রানাকে সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদকে অবহিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ‘কুয়েটের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি। ক্যাম্পাসের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

বুধবার দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (নর্থ) মো. নাজমুল হাসান রাজীব বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় গতরাতে ৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। তবে এখনও কোনো মামলা হয়নি। ক্যাম্পাসের গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

সারাবাংলা/এমপি

কুয়েটে 'ছাত্রদলের হামলা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদলের হামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর