ওয়াসার পাইপলাইন ফেটে পানি সরবরাহ বন্ধ, চট্টগ্রামে ভোগান্তি
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩২ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করার সময় ওয়াসার একটি পাইপলাইন ফেটে গেছে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ গত দু’দিন ধরে বন্ধ আছে। পানির অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরীর বড় অংশের বাসিন্দারা।
গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর কুয়াইশ এলাকায় মাটি খনন যন্ত্র এক্সেভেটরের আঘাতে ওয়াসার পাইপলাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ওইদিন থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন এলাকায় পানির সরবরাহ কমতে থাকে। এরপর গত ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সেখানে পানির সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, যে পাইপটি ফেটে গেছে সেটি ওয়াসার মূল পানি সঞ্চালন লাইন। এর মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়।
ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানান, কুয়াইশ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় একটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে। এতে ব্যবহৃত এক্সেভেটরের আঘাতে ৪৮ ইঞ্চি ব্যাসের মূল সঞ্চালন পাইপটি ফুটো হয়ে গেছে। এতে ওই পাইপ দিয়ে পানির সঞ্চালন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর অধীনে প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

মাটি খনন করে পাইপলাইনটি মেরামতে করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ জানিয়েছেন, ভূগর্ভে পাইপের অ্যালাইনমেন্ট সঠিক না থাকায় সর্বশেষ পাইলিংয়ের সময় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত দ্রুততার সঙ্গে মেরামতে পাইপলাইনটি মেরামতে ওয়াসাকে সহযোগিতা দিচ্ছে সেনাবাহিনী।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কুয়াইশ এলাকায় পাইপলাইনের অবস্থান ও নকশা তাদের দেওয়া হয়েছিল। এরপরও দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন মাটি খনন করে পাইপলাইনটি মেরামতে করা হচ্ছে। আজ (বুধবার) রাতের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’
এদিকে পাইপলাইন ফেটে যাওয়ায় নগরীর বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুর, নন্দনকানন, জামালখান, লালখানবাজার, মাদারবাড়ি, আগ্রাবাদ, জিইসি, কদমতলী, ধনিয়ালাপাড়া, নয়াবাজার, আনন্দবাজার, মোমেনবাগ, উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, রৌফাবাদ, রুবি গেট, হিলভিউসহ অন্তঃত ৩০ এলাকায় পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
নগরীর পশ্চিম বাকলিয়া এলাকার আবাসিক ভবন মালিক মোহাম্মদ ইউনূস সারাবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার বিকেল থেকে পানি কম পাচ্ছিলাম। মঙ্গলবার সকাল থেকে একেবারেই পাচ্ছি না। আমাদের ডিপ টিউবওয়েলও নেই। ভাড়াটিয়াদের জন্য বিকল্প উপায়ে পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। খুব ভোগান্তি হচ্ছে।’
চকবাজার এলাকার একটি ভবনের ভাড়াটিয়া গৃহিণী অপর্ণা দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো নোটিশ ছাড়া হঠাৎ করে পানি চলে যাওয়ায় কষ্ট বেশি হচ্ছে। গোসল, মুখ ধোয়ার পানি পর্যন্ত নেই। রান্নাবান্না বন্ধ করে ফেলতে হয়েছে। খুব কষ্ট পাচ্ছি।’
ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাইপলাইন ফেটে যাওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ১৪ কোটি লিটার পানির সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক লাখ বাসিন্দা। চট্টগ্রাম ওয়াসা এ ঘটনার জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ