Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ক্যাটাগরি’ সংশোধন চেয়ে চট্টগ্রামে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিক্ষোভ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৫

চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছেন জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের একাংশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘ক্যাটাগরি’ সংশোধনের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছেন জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের একাংশ। তাদের অভিযোগ, আহতদের যে ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে, তাতে বৈষম্য করা হচ্ছে।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদ পরিবারের ব্যানারে’ এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এর আগে, বিকেল চারটার দিকে নগরীর কাজির দেউড়ি থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আহতরা। মিছিলটি আসকারদিঘীর পাড় হয়ে জামালখানে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ইসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তার ডান হাত ভেঙেছে। আট মাস ধরে তিনি শয্যাশয়ী। স্বামীর এমন অবস্থায় বাচ্চাদের নিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন জানিয়ে ইসমাইলের স্ত্রী কলি আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা আন্দোলনে গিয়ে একটি লাঠির আঘাত পেয়েছে তাদেরকেও সরকার থেকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আজ আমার স্বামী আহত হিসেবে শনাক্ত হয়েও অবহেলার শিকার। মেডিকেলে গেলেও আমাদের অবহেলিত হতে হয়। এর-ওর কাছে যেতে বলা হয়। আমরা দেশের প্রয়োজনে আন্দোলনে আসতে পারি, তাহলে কেন আজ অবহেলিত হতে হচ্ছে। এ ও বি- দুটি ক্যাটাগরি থাকবে। সবাইকে সম্মান দিতে হবে, সবাই সমান। সবাইকে ভাতার অধীনে নিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাচ্চাকে নিয়ে এখানে এসেছি। আরেক বাচ্চাকে বাসায় রেখে এসেছি। আমার স্বামী আহত। পায়ে গুলি খেয়েছেন তিনি। ডান হাত ভাঙ্গা। ওই জায়গায় আমার স্বামীকে দেওয়া হয়েছে সি ক্যাটাগরি। আট মাস ধরে আমার পরিবার নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে। সামনে রমজান ও ইদ আসছে। আমি কি আমার বাচ্চাদের মুখে শুধু তাকিয়ে থাকব? পরিবারে আয়ের ‍উৎস শুধু আমার স্বামী। তিনি শয্যাশয়ী। আমরা এখন কার কাছে যাব?’

বিজ্ঞাপন

আন্দোলন করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন রিয়াদ সুলতানা নূরী নামে এক নারী। তিনিও এসেছিলেন কর্মসূচিতে। সুলতানা নূরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচ মিনিট দাঁড়াতে আমার কষ্ট হয়। আন্দোলনে যখন আমি নেমেছিলাম কারও কথায় নামিনি। বুকের সাহস নিয়ে আন্দোলনে গিয়েছি ও করেছি। তাহলে আজ কেন এসে আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে? যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা আমাদের নিয়ে চিন্তা করছে না। তারা আছে কমিটি নিয়ে। আগে আমরা বাঁচি। তারপর কমিটি নিয়ে চিন্তা ভাবনা।’

‘আহত অনেক ভাইয়েরা এখনো মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমরা সাহায্য নিতে গেলে আগে সমন্বয়কদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে যেতে হয়। আমরা কি আন্দোলন তাদের জন্য করেছিলাম? আমাদের কাছে তারা আসবে। চিকিৎসা নিতে গেলে সমন্বয়কদের কাছ থেকে সই নিয়ে আসতে বলা হয়। আমরা কি চব্বিশের আন্দোলন করে ভুল করেছি?’

নূরী বলেন, ‘একজন ভাইয়ের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে দেওয়া হয়েছে ডি ক্যাটাগরিতে। এটা কিভাবে হয়? এখানেও দালাল আছে। আমরা তো এসবের জন্য আন্দোলন করিনি। আমরা চাই, যারা গুরুতর আহত তাদের এ ক্যাটাগরি ও একটু কম আহতেদের বি ক্যাটাগরি নিয়ে আসা হোক। আর সবাই যেন সরকারি স্বীকৃতিটা পায়।’

সাকের উল্লাহ নামে একজন বলেন, ‘আমি বাঁশখালী থেকে এসেছি। আমি বাঁশখালীতে প্রথম গুলিবিদ্ধ। চারটি গুলি করা হয়েছে আমাকে। আমাকে দেওয়া হয়েছে সি ক্যাটাগরিতে। আমার পুরো শরীরে গুলি ও ধারালো কিরিচের কোপের আঘাত। আমাদের এ ক্যাটাগরি না দিলেও বি ক্যাটাগরি দেওয়া দরকার। এখানে বৈষম্য হচ্ছে। সেজন্য আমরা এখানে সমাবেশ করছি। সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের বি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হোক। আমাদের চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করা হোক।’

সোলেমান স্বপন নামে আরেকজন বলেন, ‘যেসব কমিটি দেওয়া হচ্ছে সেখানে আহতদের নাম নেই। কেন? আহতরা কি তাহলে আন্দোলন করেনি? আমরা সে কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছি। আর ক্যাটাগরির নামে এখানে বৈষম্য করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহতদের ক্যাটাগরি ‘এ’ অনুযায়ী, এককালীন ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন ও মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবেন। তারা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।

ক্যাটাগরি ‘বি’ অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি/আধা সরকারি কর্মসংস্থান প্রাপ্য হবেন। এ ছাড়া ক্যাটাগরি ‘সি’ তে চিকিৎসা সহায়তা পাবেন আহতরা ও ক্যাটাগরি ‘ডি’ তে প্রত্যেকে পাবেন ৫০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা সহায়তা।

সারাবাংলা/আইসি/এইচআই

ক্যাটাগরি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদ পরিবার

বিজ্ঞাপন

২২তম দিনে নতুন বই এলো ১৪৪টি
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪৫

আরো

সম্পর্কিত খবর