এখনো পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে হুমায়ূন আহমেদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৫ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:১০
ঢাকা: বাংলা কথাসাহিত্যে এক অবস্মরণীয় নাম হুমায়ূন আহমেদ। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে তার ছায়া পড়েনি। বানিয়েছেন নাটক, চলচ্চিত্র। লিখেছেন শ্রোতাপ্রিয় গান। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যাওয়া এই কথার জাদুকর তার সৃষ্ট কর্ম দিয়ে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন, জায়গা করে নিয়েছেন অগুণিত পাঠকের মনে।
হুমায়ূনের উত্থান বাংলা সাহিত্যের জন্য এক বিস্ময়। প্রাঞ্জল, সহজ-সরল গদ্যে মন্ত্র-মুগ্ধের মত তার লেখা পড়ত পাঠক। তার সৃষ্ট হিমু কিংবা শুভ্র হতে চেয়েছে অনেক তরুণ। একটা প্রজন্মকে শিখিয়েছেন জ্যোৎস্না দেখা, চাঁদের আলো উপভোগ করা।
বলতে গেলে বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পের প্রাণ ভোমরা ছিলেন হুমায়ূন। তার চলে যাওয়ার ১৩টি বছর হতে চললো। মৃত্যুর এতগুলো বছর পরেও পাঠক স্টলে স্টলে গিয়ে বলে, ‘হুমায়ূন আহমেদের বই আছে?’
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিংবা মধ্য বয়স্ক—সকল শ্রেণির পাঠক তার বইয়ের খোঁজ নেয়। কেনার তালিকায় শীর্ষে রাখছে প্রিয় লেখকের বই। অমর একুশে বইমেলার এ ১৯ দিনে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে, পাঠকের সঙ্গে কথা বলে সারাবাংলা এমনই চিত্র দেখেছে।

এখনো সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় হুমায়ূন আহমেদ জায়গা করে নেন। ছবি: সারাবাংলা
প্রকাশকরা বলছেন, হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর অনেকেই তার স্টাইল অনুসরণ করে লিখেছে। কিন্তু পাঠক সেসব বই সেই অর্থে গ্রহণ করেনি। যেখানে হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ বই প্রথম প্রকাশে ২৫-৩০ হাজার কপি ছাপানো হত, সেখানে এখানকার জনপ্রিয় লেখকদের বই চার-পাঁচশ কপি ছাপানো হয়। সব মিলিয়ে বিক্রি হাজার কপি করাও অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়।
হুমায়ূনের সর্বাধিক বইয়ের প্রকাশক অন্যপ্রকাশ। প্রকাশনাটির পরিচালক সিরাজুল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দেশের নবীন-প্রবীণ সকল ভালো লেখকের বই প্রকাশ করি। আমাদের এখানে মোটামুটি সকল লেখকের বই ভালো বিক্রি হয়। কিন্তু এখনো সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় হুমায়ূন আহমেদকে কেউ অতিক্রম করতে পারেননি।’

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিংবা মধ্য বয়স্ক—সকল শ্রেণির পাঠক মেলায় এসে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের খোঁজ নেন
কাকলী প্রকাশনীর এক বিক্রয়কর্মী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে নতুন অনেক জনপ্রিয় লেখকের বই পাওয়া যায়। তাদের বই হয়ত সারাদিনে ৪০-৫০ কপি বিক্রি হয়, কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো এর চেয়ে বেশি বিক্রি হয়। অধিকাংশ পাঠক তার বই সবার আগে খুঁজে।’
যাত্রাবাড়ীর একটি মাদরাসার শিক্ষার্থী নাঈম। তিনি জানান, তার উপন্যাস পড়তে অনেক ভালো লাগে। তাই বইমেলায় তিনি সবার আগে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের খোঁজ করেন। তিনি বলেন, ‘স্যারের অধিকাংশ বই আমার পড়া। এরপরও এক অদ্ভুত ঘোর লাগা কাজ করে তার লেখা পড়লে। অন্য লেখকদের লেখায় সেটা খুঁজে পাই না।’

বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, অধিকাংশ পাঠক সবার আগে হুমায়ূন আহমেদের বই খুঁজেন। ছবি: সারাবাংলা
সন্তানের জন্য মেলার শিশু চত্বর থেকে ছড়ার বই কিনছিলেন সাংবাদিক ফাহিম মাশরুর। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটা সময় ছিল মেলায় আসলে হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই খোঁজা হতো। এখন হয়তো আগে সন্তানের জন্য বই কিনি, কিন্তু এরপরও অভ্যাসবশত তার বইয়ের খোঁজ নিই। তার লেখার মায়া এখনো কাটাতে পারিনি।’
এত বছর পরও কেন হুমায়ূনকে খুঁজেন? এমন প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তানিম বলেন, ‘আমার যখন বুঝতে শেখার বয়স হয়েছে, তখন তিনি দুনিয়ায় নেই। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন লেখকের বই পড়ে বড় হয়েছি। রবীন্দ্রনাথ, শরৎ সবার লেখায় আমার ভালো লাগে। কিন্তু এরপরও হুমায়ূন আহমেদের লেখা বই কিনি, পড়ি। কারণ, উনি যে সহজ ভাষায় গল্পগুলো বলেছেন তা আমাকে চুম্বকের মত টানে। জটিল ভাষায় না বলে, সাধারণের ভাষায় যে মেসেজগুলো উনি দিয়েছেন—তা আর কেউ পারেনি। ওনার সৃষ্ট চরিত্র হিমু কিংবা শুভ্র এগুলোকে অনেক সময় মনে আমার জন্য লেখা। আমি নিজেকে এদের মধ্যে খুঁজে পাই।’
সারাবাংলা/এজেডএ/এইচআই