Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্দরের কাছে পাওনা ১৬০ কোটি টাকা কর আদায়ে ‘মরিয়া’ চসিক

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৩৪ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৬

চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে ‘পাওনা’ ১৬০ কোটি টাকা পৌরকর আদায়ে কোমর বেঁধে নেমেছে সিটি করপোরেশন। বারবার তাগাদার পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে চসিকের সঙ্গে একটি ‘যৌথ পুনর্মূল্যায়ন কমিটি’ করতে সম্মত হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রথম দফায় বন্দরকে চিঠি দিয়ে ১৬০ কোটি টাকা পৌরকর পরিশোধের অনুরোধ করে। কিন্তু এতে সাড়া না পেয়ে সংস্থাটি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়। মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক অবস্থান বুঝতে পেরে চসিক ফের বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করেছে। এ অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ চসিককে তাদের দাবির বিষয় পুনর্মূল্যায়নের জন্য একটি যৌথ কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চসিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে পাওনা ১৬০ কোটি টাকা পরিশোধ করলে চসিকের বিদ্যমান আর্থিক সংকট কিছুটা লাঘব হবে।

সূত্রমতে, ২০১৭ সালে চসিকের পঞ্চবার্ষিকী পুনর্মূল্যায়ন অনুযায়ী বন্দরের কাছে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পৌরকর প্রস্তাব করা হয়। তবে ওই কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম সেসময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থগিত করে দিলে এ বিষয়ে আর এগোতে পারেনি চসিক। ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর মন্ত্রণালয় আবার তাদের সিদ্ধান্ত আংশিক প্রত্যাহার করে নেয়। এতে ২০১৭ সালের পঞ্চবার্ষিকী পুনর্মূল্যায়ন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পৌরকর আদায়ের পথ খুলে যায়।

২০২১ সালে রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বন্দরকে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পৌরকর পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। এ নিয়ে দেনদরবারের পর মেয়র রেজাউলের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫০ কোটি টাকা পৌরকর নির্ধারণ হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ ১০ শতাংশ সারচার্জ মওকুফের সুবিধা নিয়ে ৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এরপর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ২০১৭ সালের পঞ্চবার্ষিকী পুনর্মূল্যায়ন অনুযায়ী পৌরকর আদায়ের বিষয়টির আর সুরাহা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। আত্মগোপনে চলে যান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকার ১৯ আগস্ট তাকে অপসারণ করে। এর মধ্যে ১ অক্টোবর নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে দায়ের থাকা এক মামলার রায়ে বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়। ৫ নভেম্বর তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

শাহাদাত হোসেন মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে আবারও ১৬০ কোটি টাকা হারে বন্দরের কাছ থেকে পৌরকর আদায়ে উদ্যোগী হন। একইসঙ্গে আগের মেয়রের পথ অনুসরণ করে বন্দরের কাছ থেকে তাদের আয়ের এক শতাংশও মাশুল হিসেবে দাবি করেন। বন্দরের পণ্য নিয়ে চলা ভারি যানবাহনগুলোর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য এ মাশুল দাবি করা হয়।

সূত্রমতে, প্রথম দফায় নভেম্বরেই চসিক বন্দরের কাছ থেকে এক শতাংশ মাশুল দাবি করে চিঠি দেন। কিন্তু আইনে না থাকার কথা বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ এতে সাড়া দেয়নি। এরপর গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পৌরকর দাবি করে বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

এক মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে সাড়া না পেয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেন। এতে নির্ধারিত পৌরকর পরিশোধে বন্দরকে নির্দেশনা দিতে অনুরোধ করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ‘ইতিবাচক সাড়া’ পেয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বন্দর কর্তৃপক্ষকে আবারও চিঠি দিয়ে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।

সূত্র জানায়, এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশনের দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অভ্যন্তরীণ চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। বন্দর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদুল আলমকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এছাড়া বন্দর সচিব চসিকের প্রধান নির্বাহীকে পৌরকর পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ১৬০ কোটি টাকা পৌরকর এবং এক শতাংশ হারে মাশুল চেয়ে আমাদের চিঠি দিয়েছিল। এক শতাংশ মাশুলের বিষয়টি বন্দরের আইন সাপোর্ট করছে না। এরপর ১৬০ কোটি টাকা পৌরকরের বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে একটি যৌথ কমিটি করব। কমিটি আবার অ্যাসাসমেন্ট করবে, কোনো খাতে কিভাবে, কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো দেখবে। এটা চার সদস্যের কমিটি হবে। খুব শিগগিরই আমরা এটা করে ফেলব।’

জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্দরের সচিব সাহেব আমাকে মৌখিকভাবে একটি জয়েন্ট অ্যাসাসমেন্ট কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ বিষয়ে লিখিত কিছু এখনও হাতে পাইনি। শুনেছি, কাল (বৃহস্পতিবার) এ ব্যাপারে উনারা ফরমাল প্রপোজাল দেবেন। প্রস্তাব পেলে তখন মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে বসে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

১৬০ কোটি টাকা কর আদায় চসিক মরিয়া

বিজ্ঞাপন

ঢাকায় রোদ, ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪০

আরো

সম্পর্কিত খবর