মানবিক ডিসি জাহিদুল ইসলাম শারীরিকভাবে অসুস্থ শিশুর পাশে দাঁড়ালেন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৫০
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার কোতালের বাগ এলাকার অসহায় গৃহবধূ বিথী আক্তার। তার স্বামী মো. কমল বেপারি পেশায় দিনমজুর। চার সদস্যের পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এমন পরিস্থিতে তাদের আদরের চার বছরের একমাত্র ছেলে সন্তান আজান ইসলাম দীর্ঘদিন যাবত শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার মাথার বাম পাশের হাড় বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনদিন। এ ছাড়া শিশু আজানের চোখের সাদা অংশ ফুলে গিয়ে বাহিরে বের হয়ে আসছে।
আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের কাছে ধার কর্জ করে এক বুক আশা নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় শিশু আজানকে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান দুরাগ্য এই রোগের চিকিৎসা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে বিথী-কমল দম্পত্তির। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্বচ্ছল ব্যক্তিদের ধারে ধারে ঘুরে কিন্তু কেউ সাহায্যের হাত বাড়ান নাই।
মা হিসেবে সন্তান আজানের দিন দিন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া মেনে নিতে পারেনি অসহায় গৃহবধূ বিথী। এমন সময় এলাকাবাসীর কাছ থেকে শুনেন নারায়ণগঞ্জ জেলার একজন মানবিক জেলা প্রশাসক যোগ দিয়েছেন।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আজানের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে লিখিত আবেদন করেন সারাদেশে মানবিক জেলা প্রশাসক হিসাবে পরিচিতি পাওয়া জাহিদুল ইসলাম মিয়ার কাছে। আবেদনের একদিনের মধ্যেই বিথীর আবেদনে সাড়া দিয়ে জেলা পরিষদের তহবিল থেকে ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। আগামী ইদের নিজের পরিবারের নতুন পোশাক না কিনে সেই টাকা আজানের জন্য দেওয়ার আশ্বাসও দেন মানবিক ডিসি জাহিদুল ইসলাম।
এই বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় আজানের মা বীথির। তিনি জানান, প্রতিমাসে আজানের ওষুধ কিনতেই ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা লাগে। এ ছাড়া তার মেয়ে রোজা ইসলামের বয়স ৫ বছর। তার জন্য শিশু খাদ্যের পিছনে অনেক টাকা খরচ হয়। তার স্বামী বিভিন্ন গার্মেন্টসে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করেন কাজ থাকলে। অন্যদিন বেকার থাকেন। তাই তাদের পক্ষে ছেলের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব না।
বীথি আরও বলেন, আমার ছেলেকে বাঁচাতে তাই গতকাল ডিসি স্যারের কাছে আবেদন করেছিলাম আর্থিক সাহায্য চেয়ে। একদিন পরেই ডিসি স্যার প্রাথমিকভাবে আমাকে নগদ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। পরবর্তীতে ব্যাক্তিগতভাবেও সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে দ্রুত অপারেশনের ব্যবস্থাও করবেন বলে জানিয়েছেন।
ডিসি স্যার এভাবে একদিনের মাথায় আমার সন্তান আজানের পাশে দাঁড়াবেন স্বপ্নেও ভাবিনি,কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন গৃহবধূ বিথী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মানবিক সাহায্যের যেকোনো আবেদন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। প্রতিদিনই এমন অসংখ্য অসহায় মানুষের ভীড় লেগেই থাকে ডিসির কার্যালয়ে। প্রতিটি সাহায্যপ্রার্থীর সঙ্গে জেলা প্রশাসক নিজে কথা বলেন। তাদের যথাসাধ্য আপ্যায়ন করতেও ভুলেন না। শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন, তাদেরকে স্বান্তনা দেন।
ডিসির এমন মানবিক কাজের প্রসংশা করে নারায়নগঞ্জের এক টুকরো হীরে বলেও ডিসি জাহিদুল ইসলামকে আখ্যায়িত করেন কেউ কেউ।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, মানুষের সেবা করার জন্যই প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলাম। আমি সব সময় চেষ্টা করি মানবিক সাহায্যের আবেদন দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করার। কারণ তাদের জুরুরি আর্থিক সাহায্য দরকার বলেই আমার কাছে আবেদন করেছেন।
সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই