Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খুচরায় চালের দর আবার বাড়ছে, শাকসবজি-মাছ-মাংস স্থিতিশীল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৫৮

বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে শাক-সবজির দাম। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহ আগে চালের দর নিম্নমুখী দেখা গেলেও এর প্রভাব এখনও পড়েনি খুচরায়। বরং খুচরায় চালের দর আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল নিয়ে কারসাজি অব্যাহত আছে। দফায় দফায় অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এর ফাঁকে খুচরায় সয়াবিন তেলের বাড়তি দাম নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে বাজারে ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম আবারও বেড়েছে। শবে বরাতের কারণে সপ্তাহের শুরুতে মুরগির দর কিছুটা বাড়লেও শেষদিকে এসে দাম আবারও কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে রসুনের দাম। শাকসবজির দর যথারীতি ক্রেতার নাগালের মধ্যে আছে। মাছ-মাংসসহ অন্যান্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসেন নন্দনকাননের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ইব্রাহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুরো শীতের মৌসুমটা শাকসবজি কিনে স্বস্ত্বি পেয়েছি। চালের দাম এত বেশি কেন, বুঝতে পারছি না। মাছ, মাংসের দামটা কমাতে পারলে আমরা আরেকটু ভালো থাকতে পারতাম।’

পাহাড়তলীর আড়তে গত সপ্তাহে বিভিন্ন ধরনের চাল কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছিল। প্রতিকেজি বেতি আতপ ৫৩ টাকা, নাজিরশাইল সিদ্ধ ৩৫ থেকে ৩৬ আর পাইজাম সিদ্ধ বিক্রি হয়েছে ২৮ টাকায়। আড়তে সেই দর এ সপ্তাহেও অব্যাহত আছে, বাড়েওনি, কমেওনি।

খুচরা বাজারে চালের দর বরং আগের চেয়ে কেজিতে ২-৩ টাকা করে বেড়েছে। যেমন- প্রতি কেজি নাজিরশাইল হাফসিদ্ধ মানভেদে ৮৫ ও ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট সরু আতপ চাল মানভেদে ৫৮, ৬৫ ও ৭৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইজাম সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০ টাকায়। ব্রি-২৮ চাল মানভেদে ৮০ ও ৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা, চায়না ও ইরি মানের মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনিগুঁড়া চালের দাম প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ৪০ টাকা বেড়েছে। খোলা চিনিগুঁড়া প্রতিকেজি ১৪০ টাকা এবং কিছুটা উন্নতমানের চিনিগুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

বিজ্ঞাপন

পাইকারি ও খুচরা দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদামতো সয়াবিন তেলের বোতল সরবরাহ করছে না। কিছু তেল সরবরাহ করলেও এর সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছে তাদের কোম্পানির অন্যান্য পণ্য। এ অবস্থায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা গত দু’দিন ধরে নগরীর কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দফায় দফায় অভিযান চালিয়েছে। সয়াবিন তেলের বোতল মজুত করে রাখার অভিযোগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছে।

ছবি: সারাবাংলা

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কাজির দেউড়ি বাজারে অভিযানের পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক ফয়েজ উল্লাহ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে একটি বিষয় শোনা যাচ্ছে যে বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এখানে এসে সব প্রতিষ্ঠানে দেখেছি তেল পর্যাপ্ত আছে। স্পষ্ট যে বাজারে প্রচুর পরিমাণে তেল সরবরাহ হচ্ছে কোনো ক্রেতা যদি তেল না পান, এটা বিক্রেতার কারসাজি।’

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকা, দুই লিটার বোতল ৩৪৮ থেকে ৩৫০ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৮৫০ থেকে ৮৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারের বাইরে এবং বিভিন্ন অলিগলির দোকানে প্রতি লিটারে অন্তঃত ২০-৩০ টাকা বাড়তি দাম দাবি করতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, পাম সুপার ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরিষার তেল খোলা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। এ হিসেবে সরিষার তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৫০ টাকার বেশি।

ব্রয়লার মুরগির ডিমের ডজন গত সপ্তাহে ১২৫ টাকা ছিল। গত শুক্রবার থেকে অন্তঃত ১০ টাকা বেড়ে এখনও ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে অলিগলির মুদি দোকানে। তবে বাজারে কোথাও কোথাও ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া দেশি মুরগির ডিম প্রতি ডজন ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম আবারও বেড়েছে। ছবি: সারাবাংলা

ব্রয়লার মুরগি গত শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) শবে বরাতের দিন প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সপ্তাহের শুরুতে আরও অন্তঃত দুইদিন এ দাম অব্যাহত ছিল। কিন্তু সপ্তাহের শেষদিকে এসে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ব্রয়লার মুরগি বাজারে প্রতি কেজি ১৮০-১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া সোনালি মুরগি প্রতি কেজিতে অন্তঃত ৩০ টাকা কমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৪০ থেকে ৫৮০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গরুর মাংস হাড়ছাড়া প্রতিকেজি ৯৫০ টাকা এবং হাড়সহ ৭৫০ থেকে ৭৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খাসির মাংস বাজারে ১১০০ টাকা, আবার অলিগলির দোকানে ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৫৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি রসুন প্রতিকেজি অন্তঃত ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকায়। চায়না রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় আদা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, চায়না আদা ২২৫ টাকা, দেশি আদা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিন রিয়াজউদ্দিন বাজারে শাকসবজির দর যাচাই করে দেখা যায়, প্রায় সবগুলোই আগের মতোই আছে। দাম বাড়েওনি, কমেওনি। বিক্রেতারা জানালেন, দুই মাসেরও বেশিসময় ধরে একই দামে তারা শাকসবজি বিক্রি করছেন, কারণ এবার প্রচুর সরবরাহ।

মাছের মধ্যে বাজারে আকারভেদে প্রতিকেজি রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতলা মাছ ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ও শিং মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, বেলে ও আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ট্যাংরা প্রতিকেজি ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাষের কই ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে।

ছবি: সারাবাংলা

বাজারে মানভেদে আলু প্রতিকেজি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন কিছু আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি, ফুলকপি, মূলা, শিম, টমেটোসহ শীতকালীন সবজি ১৫ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে আছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩০ টাকার মধ্যে। কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শসা ৩০, মিষ্টিকুমড়া ৩০, করলা ৪০, মটরশুঁটি ৭০, গাজর ৪০ টাকা, বরবটি ৫০ ও লাউ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাকের মধ্যে লাল শাক, লাউ শাক, মুলা শাক, পালং শাক, কলমি শাক, ডাঁটা শাক আগের মতোই ১০ থেকে ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিকেজি ১৯০ থেকে ২১০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ের বিক্রেতা সোলায়মান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত শুক্রবারের আগপর্যন্ত ১৮০-১৯০ টাকার মধ্যে ছিল। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে ২০০ টাকায় উঠেছে। এটা পুরো সপ্তাহ সেই দামেই আছে।’

রমজানকে সামনে রেখে প্রতিবছর ছোলার দর বেড়ে যায়। তবে এবার কিছুটা স্থিতিশীল আছে। রিয়াজউদ্দিন বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজিদরে। খুচরায় বিভিন্ন মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। অবশ্য এক সপ্তাহ আগে ছোলার দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা কম ছিল।

ডালের মধ্যে ছোট মসুরের ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৩০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, প্যাকেট আটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, খোলা ময়দা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাদা ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা ও লাল চিনি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/এনজে

চট্টগ্রাম বাজারদর

বিজ্ঞাপন

কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:১৩

আরো

সম্পর্কিত খবর