সাদা-কালোর বর্ণচ্ছটায় বইমেলায় একুশের আবহ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:১১ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:১৮
‘আজ আমি শোকে বিহ্বল নই,
আজ আমি ক্রোধে উন্মত্ত নই,
আমি আজ রক্তের গৌরবে অভিষিক্ত…।’
হ্যাঁ বাঙালি মাত্রই ৫২-এর ভাষা শহিদদের রক্তের গৌরবে অভিষিক্ত। এই গৌরব যুগ যুগ ধরে বয়ে চলেছে বাঙালি। এই গৌরবেই বাঁচে বাঙালির চেতনা। তাই প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারির মাসেই আয়োজন করা হয় মায়ের ভাষা থেকে উৎসারিত বর্ণমালার গ্রন্থবদ্ধ সম্মিলন ‘অমর একুশে বইমেলা’। মাসব্যাপী এই মেলার গুরুত্বপূর্ণ দিনটি ২১ ফেব্রুয়ারি। এই দিনে বই মেলায়ও মিশে যায় শোকের আবহ। পোশাকে সাদা-কালোর মিশেলে একুশের ভাবগাম্ভীর্য উঠে আসে।
প্রতিবছরের মতো আজকের এই দিনেও বইমেলায় আসা পাঠক-দর্শনার্থীদের পোশাক ও সাজসজ্জায় ছিল শোকের আবহ ও গৌরবের বর্ণচ্ছটা। মূলত বাংলা ভাষার বিভিন্ন প্রতীক, বর্ণ ও একুশের ঐতিহ্যের চিহ্ন ঠাঁই পেয়েছে বইপ্রেমীদের পোশাকে। একুশের চেতনা হলো স্বদেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা। একুশ মানেই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চেতনা। তাই একুশের গান-কবিতার মতো পোশাকে নকশা-ভাবনার মূল উপজীব্য হয়ে ওঠে কখনো বর্ণমালা, কখনো একুশের গান-কবিতা, কখনো শহিদ মিনার, কখনোবা শহিদ মিনারে আঁকা আলপনা।

বইমেলায় আসা পাঠক-দর্শনার্থীদের পোশাক ও সাজসজ্জায় ছিল শোকের আবহ ও গৌরবের বর্ণচ্ছটা। ছবি: সারাবাংলা
এদিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে, নারীরা পরেছেন সাদা ব্লাউজের সঙ্গে কালো শাড়ি। আবার কেউ সাদা শাড়ির সঙ্গে কালো ব্লাউজ। তরুণীরা পরেছেন বিভিন্ন ডিজাইনের সাদা-কালো জামা। পুরুষেরা পরেছেন সাদা পায়জামার সঙ্গে একুশের চেতনা স্বদেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসার চেতনা। কেউ পরেছেন কালো পাঞ্জাবি, কেউবা কালো টি-শার্ট। শুধু দর্শনার্থীরাই নয়, মেলার স্টল-প্যাভিলিয়নে কাজ করা কর্মীরাও সেজেছেন সাদা-কালো সাজে।
আজকের দিনে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মোহাম্মদপুর থেকে দলবেঁধে বইমেলায় আসা একদল উদ্যোক্তার সঙ্গে। তাদের একজন তাজমীন নাসরিন। তিনি বলেন, ‘সবাই সাদাকালো আর বর্ণমালার পোশাক সিলেক্ট করে মেলায় ঘুরতে এসেছি। নিজেকে ও ছেলে মেয়েদের একুশের আবহে একীভূত করতে আমার এই ক্ষুদ্র আয়োজন অনেক ভালো লাগে।’

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ভেতরে ছড়িয়ে যায় একুশের চেতনা। ছবি: সারাবাংলা
তাদের সঙ্গে থাকা শামীমা আক্তার বলেন, ‘আমি আর আমার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বইমেলায় ঘুরতে এসেছি। আমি পোশাক সিলেক্ট করতে গিয়ে এবার গতানুগতিক সাদাকালো রঙের বাইরে অন্য কালারগুলোকে বেছে নিয়েছি, যা আমার খুবই পছন্দ। এই দিনটি আমাদের জন্য গৌরবের ও শোকের। সেজন্য দিবসের সঙ্গে মিল রেখে একটু আলাদাভাবে নিজেকে তুলে ধরার জন্যই এই সাজ।’
অমর একুশের দিন বইমেলার দিনটি সবসময়ই আলাদা। এদিন সকাল সাতটায় মেলার গেট খুলে যায়, আর বন্ধ হয় রাত ৯ টায়। অমর একুশের দিনের বইমেলা সব সময়ই আলাদা। পোশাকে সাদা-কালোর বর্ণচ্ছটা থাকলেও হৃদয়ে লালন হোক একুশের চেতনা- এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
সারাবাংলা/এনএল/পিটিএম