শহিদ রফিক গ্রন্থাগার
পাঠক থাকে না সারাবছর, দায় সারে একুশে ফেব্রুয়ারিতে
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫৮ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৩
মানিকগঞ্জ: ৫২’র ভাষা আন্দোলনের প্রথম বীর শহিদ রফিক উদ্দিন আহমেদ। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামের এই কৃতী সন্তানের নামে নির্মাণ করা হয়েছে শহিদ রফিক গ্রন্থাগার ও জাদুঘর। ১৬ হাজার বইয়ের ভাণ্ডারে সুসজ্জিত গ্রন্থাগারটি। পাঠকদের মনের খোরাক জোগাতে প্রায় সবধরনের বই রয়েছে। কিন্তু বইপ্রেমী মানুষের বড়ই অভাব। প্রায় সারা বছরই কার্যত শুনশান নীরব থাকে ভাষা শহিদের নামে নির্মিত এই গ্রন্থাগারটি। দিনে ২-৪ জন পাঠকের দেখা মেলে না। অথচ একুশ ফেব্রুয়ারি এলেই কিছু পাঠকের পদচারণা পড়ে।
ভাষা শহিদ রফিক গ্রন্থাগার ও জাদুগারের লাইব্রেরীয়ান ফরহাদ হোসেন খান অকপটে স্বীকার করেন পাঠক না আসার কথা। স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং এলাকার মানুষজন গ্রন্থাগারমুখী হলেই পাঠাগারটিতে প্রাণ ফিরে আসবে।
বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ভাষা শহিদ রফিক গ্রন্থাগার এবং জাদুঘরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হলেও অনুষ্ঠান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে পাঠকদের পদচারণা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৪ মে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ রফিক নগরে নির্মাণ করেছে ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিন আহমদ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি।
নির্মাণের পর বাংলা একাডেমি থেকে প্রায় ১২ হাজার বই দেওয়া হয় গ্রন্থাগারে। প্রথম দিকে গ্রন্থাগারটিতে দর্শনার্থী ও পাঠকের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। দূর-দূরান্ত এলাকা থেকেও ভাষাশহিদ রফিকের স্মৃতি বিজড়িত গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে মানুষজনের পদচারণা থাকলেও কয়েক বছর ধরে স্থবির হয়ে পড়েছে। দিন যাচ্ছে গ্রন্থাগার ও পাঠাগারের প্রতি মানুষজনের অনীহা বাড়ছে।

এভাবেই জনমানবশূন্য হয়ে থাকে ভাষা শহিদ রফিকের স্মৃতি বিজড়িত গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি
এলাকাবাসী জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে পাঠকশূন্য অবস্থা বিরাজ করলেও তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের বড় বড় পদে থাকা বিভিন্ন দফতরের নেতা এবং প্রশাসনের কোনো ধরনের মাথা ব্যথা ছিল না। গ্রন্থাগারে পাঠকমুখী করতে কোনো ধরনের তৎপরতা দেখাতে পারেনি। জেলা প্রশাসনের আওতায় থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই বড় বড় বাজেটে বিভিন্ন অজুহাতে সংস্কার কাজ করা হয়েছে মাত্র। কিন্তু পাঠাগারের প্রাঞ্চলতা ফেরাতে পারিনি।
এলাকাবাসীরা বলছেন, শুধুমাত্র ২১ ফেব্রুয়ারি এলে কিছু পাঠক দেখা যায়। কিন্তু সারাবছর পাঠক থাকে না। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়তে পাঠাগারমুখী করতে প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী ও দর্শনাথী জানান, ভাষা শহিদ রফিকের গ্রামের বাড়িতে নির্মিত গ্রন্থাগার ও জাদুঘর দেখার জন্য তারা বেশ আগ্রহ নিয়েই আসেন। গ্রন্থাগারে ভাষা শহিদদের ওপর লেখা বই ও জাদুঘরে শহিদ রফিকের স্মৃতি বিজড়িত উপকরণ দেখার জন্যই মূলত তারা এই গ্রন্থাগার আসেন। কিন্তু গ্রন্থাগারটিতে এসে তারা বিমুখ হয়ে যান।

একুশে ফেব্রুয়ারি ব্যতীত বছরের অন্যান্য সময় দেখা মিলে দুই একজন পাঠকের
দূর থেকে আশা দর্শনার্থী রবিউল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, ভাষাশহিদ রফিক সম্পর্কে আরও বেশি জানার আগ্রহ নিয়ে মূলত তার এখানে আসা। তিনি বলেন, ‘তিন ঘণ্টা পাঠাগারে অবস্থান করেও আমি ছাড়া কোনো পাঠক চোখে পড়েনি। পাঠক ছাড়া পাঠাগারের প্রাণ থাকে না।’
ভাষাশহিদ রফিকের ভাতিজা শাহজালাল বাবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার চাচা ভাষার জন্য জীবন দেওয়ায় এই পরিবারের সন্তান হয়ে আমি গর্বিত। কিন্তু বড় কষ্ট হয় গ্রন্থাগার ও পাঠাগারটির দিকে তাকালে। পাঠাগারে বই পড়ার মতো কোনো পাঠক না আসায় শহিদ পরিবারের সন্তান হিসেবে খুব কষ্ট হয়।’
ভাষাশহিদ রফিক গ্রন্থাগার ও জাদুঘরের লাইব্রেরিয়ান ফরহাদ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাঠাগারে প্রায় ১৬ হাজারের উপরে বই রয়েছে কিন্ত পাঠক নেই। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাঠক বাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও অনুষ্ঠানের ২-৪ দিন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর আর পাঠকের দেখা পাওয়া যায়না।’ তার পরামর্শ পাঠক বাড়াতে প্রথমে স্থানীয় অভিভাবকদের পাঠাগারমুখী হতে হবে। তারা যদি পাঠকমুখী হয় তাহলে নতুন প্রজন্ম তাদের দেখাদেখি পাঠাগারে আসবে এবং বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।’
মানিকগঞ্জ জেলা সরকারি গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান শেখ রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো পাঠাগারের প্রাণই হচ্ছে শিক্ষার্থী ও এলাকার যুবক তরুণীরা। প্রথমে স্থানীয়দের পাঠাগারমুখী হতে হবে এবং পাঠাগার সম্পর্কে জানতে হবে। পাশাপাশি স্কুল,কলেজ, মাদরাসা ভিজিট করতে হবে এবং বই পড়া সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করতে হবে।’
সারাবাংলা/এসডব্লিউ