টেন্ডার বাক্স লুট
বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৪১ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৪৪
রাজশাহী: রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয় থেকে দরপত্র লুটের ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রশাসনিক হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে দলটির নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) পবা উপজেলার বায়া এলাকায় নওহাটা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দল এই বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্থানীয় ঠিকাদার মোবাশ্বের লাল্টু পবার খড়খড়ি হাট ইজারা পেতে আগ্রহীদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট করেছিলেন। তারা অন্য কাউকে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে দিচ্ছিলেন না। কিন্তু জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম ডনি ওই সিন্ডিকেটের ভেতর না গিয়ে দরপত্র দাখিল করেন।
বক্তারা আরও বলেন, ডনির দরপত্র দাখিল করতে বাধা দেন লাল্টু ও তার লোকজন। সেই বাধা উপেক্ষা করে ডনির দরপত্র টেন্ডার বাক্সে ফেলা হয়। এরপরই দরপত্র বাক্স ইউএনওর কার্যালয়ের সামনে থেকে বের করে ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় ককটেল ও গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। যুবদল নেতা শাকিলুর রহমান রনকে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং বাক্স থেকে সব দরপত্র লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
সমাবেশে জানানো হয়, টেন্ডার লুটের অভিযোগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য নেতাকর্মীদের বাড়িতে যৌথবাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অথচ যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তারা অভিযোগ করেন, পুলিশের কাছ থেকে তারা জেনেছেন যে ঘটনার সময়ের সিসি ক্যামেরার আড়াই মিনিটের ভিডিও ফুটেজ ইউএনও’র কার্যালয় থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। তারা এর তদন্ত দাবি করেন। পাশাপাশি বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি বন্ধ করে যারা প্রকৃতই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
নওহাটা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিলনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন- নওহাটা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন, নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম পিটার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান লিটন, নওহাটা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুনুর সরকার জেড, জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম ডনি, বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম শরিফ, নওহাটা পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
বিক্ষোভ-সমাবেশে নওহাটা পৌর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আলিফ উদ্দিন, নওহাটা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাসেল, নওহাটা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দল সদস্য সচিব গোলাম রাব্বানী ও যুগ্ম আহ্বায়ক মিলন মন্ডল প্রমুখ।
দরপত্র লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাশ্বের লাল্টু বলেন, ‘এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি জানি যে ঘটনা ঘটেছে এবং এটা বিএনপি-বিএনপি দ্বন্দ্ব। এর বাইরে আমি কিছু জানি না। হাটের কাছে আমার বাড়ি সে জন্য হয়তো আমাকে জড়াচ্ছে।’
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মুছে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ‘অস্বীকার করার সুযোগ নেই, ফুটেজ মুছে ফেলা যাবে না। কিন্তু আসলেই তা হয়েছে কিনা তা তদন্তের পর বলা যাবে। ডিবি মামলা তদন্ত করছে। তারা ডিভিআর নিয়ে যাবে। তারা তদন্ত করে বলতে পারবে। আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না।’
উল্লেখ্য, গত ৩ ফেব্রুয়ারি পবার ইউএনওর কার্যালয়ের সামনে থেকে দরপত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা করে উপজেলা প্রশাসন। মামলাটি তদন্ত করছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
এ মামলায় নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই।’
সারাবাংলা/এইচআই