Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘হেপাটাইটিস-বি’ হলে কি বিয়ে করা নিষেধ?— যা বলছেন চিকিৎসকরা

মেহেদী হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:৩৩

প্রতীকী ছবি

ঢাকা: ‘চট্টগ্রামে আমার বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হয়েছে, কিন্তু হঠাৎ জানা গেল ছেলের হেপাটাইটিস বি পজিটিভ। ছেলে খুব ভালো, তবে হেপাটাইটিস বি এর কারণে বিয়েটা পরে ভেঙেই গেল। এমন হলে যাদের হেপাটাইটিস বি পজিটিভ, তাদের কি বিয়ে না করে থাকতে হবে?’ কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লার বাসিন্দা তাহমিনা আক্তার।

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার বান্ধবীর সেই ছেলেকে খুবই পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হওয়ায় তার পরিবার পিছিয়ে যায়। ডাক্তার বলেছিল, ‘চিকিৎসা নিয়ে ভালো হওয়ার পর বিয়ে করতে।’ তাহলে যাদের এই ভাইরাসটি হয়েছে তাদের কি বিয়ে করা উচিত না? হেপাটাইটিস বি আসলেই কি খুবই ভয়ানক?’’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন রাজধানীতে বসবাস করা সাবিকুন। দুই পরিবারের কেউই জানেন না তাদের বিয়ের বিষয়ে। কিন্তু হঠাৎ একদিন সাবিকুন জানতে পারেন তার স্বামী হেপাটাইটিস বি পজিটিভ। এটি নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত থাকতেন। এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন স্বামীর সঙ্গে থাকলে তারও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই আতঙ্কে তাদের দেড় বছরের সম্পর্কের ইতি ঘটে।

শুধু তাহমিনা, তার বান্ধবীর পরিবার ও সাবিকুনরাই নয়, এ বিষয়ে কম জানার ফলে হেপাটাইটিস বি নিয়ে অনেক ভয়, আতঙ্ক ও অজ্ঞতা কাজ করে সাধারণ মানুষের মনে। অনেকে আবার এই ভাইরাসটিতে সংক্রমিত লোকদের বাঁকা চোখে আলাদাভাবেও দেখেন।

হেপাটাইটিস বি-এর আদ্যোপান্ত নিয়ে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আয়শা আক্তারের। হেপাটাইটিস বি হলে বিয়ে করা যাবে না— এ রকম কোনো বিষয় আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হোপাটাইটিস বি রোধে জন্মের পরপরই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এতে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। আর কেউ যদি এটা দিতে ভুলে যায় বা না দেয় তাহলে বুস্টার ডোজের ব্যবস্থা আছে। তবে এ ক্ষেত্রে টেস্ট করাতে হবে। কারণ, রক্তে যদি আগে থেকেই হোপাটাইটিস বি ভাইরাস থাকে সে ক্ষেত্রে ডোজ দিয়ে কাজ হবে না। আর রক্ত টেস্ট করানোর পর হোপাটাইটিস ভাইরাস না থাকলে টিকা দিতে পারে। এটা দিলে তিনি নিরাপদে থাকলেন। তবে এ ভাইরাসটি হলে বিয়ে করা যাবে না তেমনটি নয়। অবশ্যই বিয়ে করা যাবে, তবে তাকে এটা ছড়ানোর বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দ্রুত টেস্ট করানোর পর নেগেটিভ থাকলে ভ্যাকসিন দিয়ে দেওয়াই হলো সবচেয়ে ভালো উপায়।’

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার

দম্পতিদের কারও হোপাটাইটিস বি থাকলে আরেকজন সংক্রমিত হতে পারেন কিনা?— এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রক্তের মাধ্যম ছাড়া দম্পতিদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ছড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে বাচ্চা ডেলিভারির সময় প্রসূতি মায়েদের প্রেসক্রিপশনে এটা লিখে দেওয়া হয়। কারণ, তার কাছ থেকে সুযোগ থাকে রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার। সিজার করার সময় যদি কারো পজিটিভ থাকে সেক্ষেত্রে সেপটিক মেনে নেওয়া হয়। রক্ত দেওয়ার সময় আমরা ক্রস ম্যাচিং করছি, স্ক্রিনের মাধ্যমে দেখছি যে তার হেপাটাইটিস আছে কিনা। আর যারা যৌনপল্লিতে কাজ করেন তাদেরও উচিত সবসময় প্রটেকশন ব্যবহার করা।’

হেপাটাইটিস বি হলেই কি চিকিৎসা নিতে হবে? সবারই কি চিকিৎসা নেওয়ার দরকার আছে?— এ বিষয়ে ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ‘যদি পজেটিভ আসে, সেই ক্ষেত্রে তার চিকিৎসা দরকার আছে কিনা তা লিভারের ওপর নির্ভর করে। লিভারের ফাংশন যাচাই করে দেখতে হবে যে তার ওই চিকিৎসা নেওয়ার দরকার আছে কিনা। অনেকে পজিটিভ নিয়েও বছরের পর বছর ভালো আছেন, তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারণ, তার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না। তবে তাকে নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে, লিভারে সমস্যা হওয়া মাত্রই তাকে চিকিৎসা নিতে হবে। হেপাটাইটিস বি যদি সক্রিয় থাকে তাহলে তাকে চিকিৎসা নিতে হবে। আর নিক্রিয় থাকলে নিয়মিত চেকআপ করে খেয়াল রাখতে হবে। লিভার সিরোসিস থেকে মুক্ত থাকতে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে। নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে তেমন না, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে চলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘হেপাটাইটিস ভাইরাস গুলো হলো— এ বি সি ডি ই পর্যন্ত। এর মধ্যে ‘এ’ আর ‘ই’ পানি বাহিত এবং ‘বি’ আর ‘সি’ রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। একজনের সিরিঞ্জ আরেকজন ব্যবহার করলে বা একজনের শেভিং ব্লেড আরেকজন ব্যবহার করতে হঠাৎ কেটে গেলে রক্তসংবহনতন্ত্রের মাধ্যমে ‘বি’ আর ‘সি’ ছড়ায়। এর মধ্যে হেপাটাইটিস ‘বি’ এর সংক্রমণ বেশি। তবে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় না বা এমনকি খাদ্য ও পানির মাধ্যমেও এর বিকাশ হয় না। এটা রক্তের সংক্রমণ থেকে ছড়ায়।’

ইনস্টিটিউট অফ হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাকসুদ বিল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলেই আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নাই। আর এটি হলেই যে ওষুধ সেবন করতে হবে সেটিও না। আগে টেস্ট করে জানতে হবে এই ভাইরাসটি শরীরে সক্রিয় কিনা। যদি সক্রিয় থাকে তাহলে চিকিৎসা নিতে হবে। আর যদি নিক্রিয় থাকে এবং শরীরে কোনো ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব না ফেলে তাহলে ওষুধ খাওয়ার দরকার নাই। নিয়মিত তাকে টেস্ট করিয়ে জেনে নিতে হবে ভাইরাসটি তার শরীরে কোন পর্যায়ে রয়েছে।’

হেপাটাইটিস বি আছে কিনা বোঝার উপায় ও প্রতিরোধ

এক তৃতীয়াংশ লোক কিছুই বুঝতে পারে না যে এই ভাইসাটিতে তিনি সংক্রমিত কিনা। এক তৃতীয়াংশ লোকের মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, বমি ভাব ও গা শিরশির করে জ্বর হয়। আবার অনেকের জন্ডিস, খুদামন্দা, ডায়রিয়া, বমি ও জ্বর দেখা যায়। হেপাটাইটিস বি ২০-৩০ বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে লিভারের ক্ষতি করে। চিকিৎসা না করা হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত প্রায় ২০ শতাংশ রোগীর বিকাশ ঘটে লিভার সিরাজিসে। এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার একমাত্র উপায় হলো নিজের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অর্থাৎ হেপাটাইটিস ‘বি‘ এর টিকা নেওয়া। হেপাটাইটিস বি এর চারটি ডোজ নিতে হয়। প্রথম তিনটি এক মাস পর, চতুর্থ ডোজ প্রথম ডোজের এক বছর পরে নিতে হবে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বে ২৯ কোটি ৬০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। আর বাংলাদেশে আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ পুরুষ ও ৩৩ শতাংশ নারী এবং ৫৭ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে।

সারাবাংলা/এমএইচ/এইচআই

ভাইরাস ভ্যাকসিন হেপাটাইটিস বি

বিজ্ঞাপন

বসন্তের সন্ধ্যা ভিজল বৃষ্টিতে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫০

আরো

সম্পর্কিত খবর