Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রেকর্ড আমদানি
রোজায় ভোগ্যপণ্যের সংকট হবে না

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:০০ | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:০২

ভোগ্যপণ্য। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: রমজানকে কেন্দ্র করে দেশে আমদানিনির্ভর ছয়টি ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। পণ্যগুলো হচ্ছে- ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, চিনি, খেজুর ও পেঁয়াজ। এবার রোজার মাসকে সামনে রেখে এসব পণ্য রেকর্ড পরিমাণে আমদানি হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বিপুল আমদানির কারণে রমজানের আগমুহূর্তে বাজারে এসব পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রতিবছর রমজান শুরুর অন্তত দুই/তিন মাস আগ থেকে এসব পণ্য আমদানি শুরু হয়। এবারের রমজান শুরুর একমাস আগেই আমদানি পণ্যে সয়লাব হয়েছে বাজার। শুধুমাত্র বোতলের সয়াবিন তেল ছাড়া বাজারে এই মুহূর্তে রমজানের পণ্যের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

আমদানিকারকরা বলছেন, যে পরিমাণ পণ্য দেশে ঢুকেছে, তাতে রমজান মাসে সরবরাহে কোনো ধরনের সংকট হওয়ার কথা নয়। আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারাও বলছেন, নতুনভাবে আমদানির পাশাপাশি রমজানের অত্যাবশ্যকীয় এসব পণ্য বিপুল পরিমাণে মজুত আছে। অথচ এর বিপরীতে বাজারে ক্রেতা এখনো কম। এ কারণে বাজারে এবার রোজার পণ্যের দাম বাড়ারও আশঙ্কা নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রমজান মাসে চাহিদা বাড়ে- এমন নয়টি ভোগ্যপণ্যের এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমদানি বেড়েছে। পণ্যগুলো হলো- চিনি, সয়াবিন তেল, ডাল, মটর, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও খেজুর। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এসব পণ্য আমদানিতে গড়ে ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ মেট্রিকটন। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চিনি আমদানি হয়েছে ২০ শতাংশ বেশি। সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ মেট্রিক টন, প্রবৃদ্ধি ৩৪ শতাংশ। বিশেষ করে মসুর ডালসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৭ মেট্রিক টন, যা আগের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। ছোলা আমদানির পরিমাণ ৯৭ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন, প্রবৃদ্ধি ৬৪ শতাংশ। মটর ডাল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন, যা আগের সময়ের চেয়ে ৮৫ শতাংশ বেশি।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া খেজুর আমদানি হয়েছে ১৪ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন, প্রবৃদ্ধি ২৩ শতাংশ। পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন, প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ। রসুন আমদানি হয়েছে ৬১ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন, প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ এবং আদা আমদানি হয়েছে ৫২ হাজার ৫১৫ মেট্রিক টন, যা আগের সময়ের চেয়ে ৫৬ শতাংশ বেশি।

রমজানের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ৮৮ শতাংশ আমদানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, গত জানুয়ারিতে আমদানি করা ভোগ্যপণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে ৫৩টি জাহাজ। ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ৩২টি জাহাজ। এসব জাহাজ থেকে গত দু’মাসে ভোগ্যপণ্য এসেছে প্রায় ২৩ লাখ মেট্রিক টন।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে দেশে ছোলা আমদানি হয়েছে ১২ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। এর মধ্যে শুধু জানুয়ারিতে আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। ফেব্রুয়ারিতে এ পর্যন্ত এসেছে আরও ৫০ হাজার টনের বেশি। রমজানে ছোলার চাহিদা থাকে এক লাখ টনের মতো।

জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মসুর ডাল আমদানি হয়েছে ৬২ হাজার মেট্রিক টনের মতো। ফেব্রুয়ারিতে এসেছে আরও ২৫ হাজার মেট্রিক টন। রোজায় দেশে মসুর ডালের চাহিদা থাকে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন। একইসময়ে মটর ডাল আমদানি হয়েছে এক লাখ মেট্রিক টনের বেশি, যা চাহিদার প্রায় সমপরিমাণ।

জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চিনি আমদানি হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। ফেব্রুয়ারিতে আসা আরও প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন খালাসের অপেক্ষায় আছে। রোজায় চিনির চাহিদা থাকে তিন লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি।

জানুয়ারিতে সয়াবিন ও পামতেল মিলিয়ে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে চার লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু রোজায় তিন লাখ টনের মতো চাহিদা থাকে।

২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয়েছে ৪৩ হাজার ২৭৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু জানুয়ারিতে আমদানি হয়েছে ২২ হাজার মেট্রিক টন। রোজায় চাহিদা প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টনের মতো, যা ফেব্রুয়ারিতে আসা চালান দিয়ে পূরণ হয়ে যাবে বলছেন আমদানিকারকরা।

তবে পেঁয়াজের আমদানি কমেছে। দেশে মাঠ থেকে নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকায় এবার আমদানিতে আগ্রহ দেখাননি ব্যবসায়ীরা। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন। এর বাইরে স্থলবন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা অন্তত ৩০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রোজায় শুধু চাহিদা থাকে তিন থেকে চার লাখ টনের মতো।

চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তে এসব পণ্যের মজুতে ঘাটতি নেই। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে সেখানে ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাকে-ট্রাকে আসছে রমজানের ভোগ্যপণ্য। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, বাজারে রমজানের পণ্যের সরবরাহ সংকট নেই। তবে এবার আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট বেশি। এ কারণে আমদানিতে বাড়তি ব্যয় হয়েছে। তবে দেশের বাজার দাম এখনো স্থিতিশীল আছে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য শুধু আমদানি হলেই হবে না। সেটা বাজারে পৌঁছাতে হবে। আবার বাজার থেকে সেটা ন্যায্যমূল্যে ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে হবে। অর্থাৎ অতিরিক্ত মুনাফার কবলে যাতে বাজার না পড়ে, সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে। এজন্য প্রশাসনের নজরদারি জোরদার করা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘এত ভোজ্যতেল আমদানি হলো, তারপরও বাজারে সংকট কেন? সেটা হচ্ছে নজরদারি এবং আইনের প্রয়োগে শিথিলতার কারণে। রমজানের আগের শেষ সপ্তাহটা অর্থাৎ চলতি সপ্তাহে ভোক্তারা বাজার থেকে বিপুল পরিমাণে পণ্য সংগ্রহ করবেন। কেউ যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আমদানি ভোগ্যপণ্য রমজান রেকর্ড সংকট

বিজ্ঞাপন

২২তম দিনে নতুন বই এলো ১৪৪টি
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪৫

আরো

সম্পর্কিত খবর