নিষিদ্ধ হলেও ডিমলা ফরেস্টেই হাজারো ইউক্যালিপটাসের বিস্তার
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:১২
নীলফামারী: ইউক্যালিপটাস, পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর গাছ হিসেবে চিহ্নিত। জলবায়ুর জন্য ইউক্যালিপটাস মোটেই উপযোগী নয়। এই গাছ মাটি থেকে অতিমাত্রায় পানি শোষণ করে মারাত্মকভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়। বাংলাদেশে বনায়নের জন্য এই গাছ নিষিদ্ধ হলেও খোদ ডিমলা ফরেস্টেই এর বিস্তার ঘটেছে। সেখানে কয়েক বছর আগেই হাজার হাজার ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করা হয়েছে। শুধু বনাঞ্চল নয়, উপজেলার সড়ক ও আবাদি জমিতেও এই গাছের আগ্রাসন থামছে না।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ডিমলা ফরেস্টজুড়ে হাজার হাজার ইউক্যালিপটাস গাছ বেড়ে উঠছে, যেখানে পরিবেশবান্ধব বনজ ও ঔষধি গাছ থাকার কথা ছিল। এ গাছের বৃদ্ধি দ্রুত, কাঠ শক্ত এবং ভালো দামে বিক্রি হয়, ফলে স্থানীয়দের মাঝে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন নার্সারিতেও ইউক্যালিপটাসের চারা ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে।
তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, এই ইউক্যালিপটাস গাছের কারণে জীববৈচিত্র্য মারত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। এই গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে, যা আবাদি জমির জন্য ক্ষতিকর। একটি গাছ তার আশপাশের ১০ ফুট এলাকার ভূ-গর্ভস্থ ৫০ ফুট পর্যন্ত পানি শুষে নিতে পারে। এ কারণে কৃষিজমির উর্বরতা কমে যায়, ফসল উৎপাদন হ্রাস পায়।
ডিমলার স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ইউক্যালিপটাস গাছের বিষাক্ত পাতা মাটিতে পড়ে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। এতে জমিতে ফসল কম হয়, এমনকি কিছু জায়গায় উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। আগে যেখানে নানা প্রজাতির গাছ ছিল, সেখানে এখন শুধুই ইউক্যালিপটাসের আধিপত্য।
এলাকাবাসী জানায়, এক সময় ফরেস্ট এলাকায় প্রচুর পাখির দেখা যেত। কিন্তু ইউক্যালিপটাস বনায়নের পর পাখির সংখ্যা কমে গেছে। এমনকি ঝরা পাতার প্রভাবে মাটির রঙ বদলে যাচ্ছে, পানি পর্যন্ত কালচে হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মীর হাসান আল বান্না সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইউক্যালিপটাস গাছের পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি। এর ঝরা পাতা মাটির উর্বরতা কমায়। আবাদি জমির আশপাশে থাকলে ফসলের ক্ষতি করে। তবে এটি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।’
নীলফামারী জেলা সামাজিক বন বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা রেজাউল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘গাছগুলো যখন লাগানো হয়েছিল, তখন নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তবে এখন আমরা নতুন করে আর ইউক্যালিপটাস চারা লাগাচ্ছি না। যেগুলো আছে, সেগুলো এভাবেই থাকবে। যদি ওপর থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসে, তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডিমলা ফরেস্টে ইউক্যালিপটাসের আধিপত্য স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন ও কৃষিজমি রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার যদি ইউক্যালিপটাসের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব বনজ ও ফলদ গাছের চাষে উৎসাহ দেয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন এই সংকট মোকাবিলায় কতটা দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেয়।
সারাবাংলা/পিটিএম