ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন
’৭১ এর পরাজিত শক্তি ও পতিত আওয়ামী লীগ ঠেকাতে ভিন্ন কৌশলে বাম জোট
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৮ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩৫
ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক যাছাই বাছাইয়ের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বর্তমানে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কার্যক্রম চলছে। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে ১৩১টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে সিপিবি’র প্রার্থী ছিল ৭৪ জন।
বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ৮টি বাম ধারার রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল বাম গণতান্ত্রিক জোট। দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সামাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদ-লেলিনবাদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী দল (মার্কসবাদ-লেলিনবাদ), বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ (মার্কসবাদ-লেলিনবাদ), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি (মার্কসবাদ-লেলিনবাদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন। এর মধ্যে শেষ দুটি দল জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ছয়টি দল রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটে।
জানা যায়, নির্বাচনের প্রাক্কালে বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত ৬টি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও শ্রেণি পেশার সংগঠন, দলিত সম্প্রদায় ও আদিবাসী একাধিক গোষ্ঠী যোগ দিতে পারে। তখন বাম জোট ঠিক রেখে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করা হতে পারে।
জানা যায়, জোটের শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) দেড়শ’র বেশী আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী দেবে। অন্যদিকে ১০০ আসনে নিজস্ব প্রার্থী দেবে বাসদ। অবশিষ্ট আসনে জোটের অন্যান্য শরিক দল ও মুক্তিযোদ্ধা, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিকমনা ছোট ছোট দল থেকে প্রার্থী দেয়া হবে।
জানা যায়, বাসদসহ অন্যান্য দলগুলো তাদের দলীয় প্রার্থী প্রাথমিক যাচাই বাছাই করার কাজ শেষ করেছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের লক্ষ্য নির্বাচনী মাঠে জোটের ব্যানারে লড়াই করা। তবে নির্বাচন যখন হবে, ওই সময়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্য কোনো নির্বাচনী জোট বা ভিন্ন কৌশল নিয়েও ভোটযুদ্ধে নামার কথা ভাবছেন বাম নেতারা। তবে নূতন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠনের কথা আপাতত ভাবছেন না তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোট নেতারা বলেন, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা বিশ্বাস করে না- তাদের বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক সব সময় কঠোর অবস্থানে ছিল। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে পতিত আওয়ামী লীগ আসুক- এটাও তারা চান না। এমতাবস্থায় ’৭১ এর পরাজিত শক্তি, উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী ও পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ঠেকাতে প্রয়োজনে অন্যান্য গণতন্ত্রমনাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়বে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সিপিবি’র কর্মকাণ্ডের বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘নির্বাচনি প্রচার নিয়ে আমাদের নেতাকর্মী এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছে।’
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার বিষয় নিয়ে যখন বৈঠক করবে, তখন আমরা অভিন্ন মতামত দিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পরিধি বড় করে বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তুলবো। সে কারণে অন্য বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে যে, ভোট এলে জোট করা যায় কি না। পাশাপাশি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্যও এই জোট মাঠে থাকবে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘বামপন্থী একেকটি দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একেক রকম। বামপন্থী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দলের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা হচ্ছে। তবে বিগত দিনে আমরা সম্মিলিতভাবে স্বৈরশাসক পতনের লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন ও নিত্যপণ্যের দাম কমানো, জনজীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বাম দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকবে। শিগগিরই বাম গণতান্ত্রিক জোটের পরিধি বাড়বে।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, উগ্রপন্থী মৌলবাদী ’৭১ মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো শক্ত অবস্থানে থাকবে। নির্বাচনে হবে ভিন্ন কৌশল। কারণ রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএস