নিজেদের মধ্যে হানাহানি বন্ধ না করলে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে: সেনাপ্রধান
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৪
ঢাকা: দেশের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিজেরা নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি বা মারামারি-কাটাকাটি করলে দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে বলে সতর্ক করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সেনাকুঞ্জে জাতীয় শহিদ সেনা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এই সতর্কতা উচ্চারণ করেন তিনি।
সেনা প্রধান বলেন, আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, পরে বলবেন যে আমি সতর্ক করিনি, আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি কাটাকাটি করেন, এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজকে বলে দিলাম, নইলে আপনারা বলবেন যে, আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের। আমার অন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নাই, আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা, দেশ এবং জাতিটাকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে ছুটি করা। আই হ্যাড এনাফ লাস্ট সেভেন–এইট মান্থস, আই হ্যাড এনাফ। আমি চাই, দেশ এবং জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনা নিবাসে ফেরত আসব।’
তিনি বলেন, দেশে-আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে। আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিশোদগার করতে ব্যস্ত। অপরাধীদের জন্য এটা একটি চমৎকার সুযোগ। ওরা জানে এই সময়ে অপরাধ যদি করা যায় তাহলে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এই কারণে এইসব অপরাধগুলো হচ্ছে। আমরা যদি সংগঠিত থাকি, একত্রিত থাকি তাহলে অবশ্যই সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই এসব দেশের জন্য অতীতে প্রতিষ্ঠান অসংখ্য ভালো কাজ করেছে। খারাপ কাজের সঙ্গে ভালো কাজও করেছে। আজকে দেশ যে স্থিতিশীল রয়েছে তার কারন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সিভিলিয়ান সবাই মিলে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি সুন্দর পরিবেশে রাখা গেছে।
ডিজিএফআই, এনএসআই, র্যাব, বিজিবি অনেকে প্যানিকড। বিভিন্ন দোষারোপ, গুম, খুন ইত্যাদির তদন্ত চলছে। অবশ্যই তদন্ত হবে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমনভাবে কাজটা করতে হবে যেন প্রতিষ্ঠানগুলো আন্ডারমাইন্ড না হয়। এইসব প্রতিষ্ঠান আন্ডারমাইন্ড করে কেউ যদি মনে করেন সবাই শান্তিতে থাকবেন এটা হবে না। আমি পরিস্কার করে বলে দিচ্ছি। দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব শুধু সেনাবাহিনীর না। দুই লাখ পুলিশ আছে, বিজিবি আছে, র্যাব আছে, আনসার ভিডিপি আছে। আর আমার আছে ৩০ হাজার সৈন্য। এতোবড় গ্যাপ আমি ৩০ হাজার সৈন্য দিয়ে কিভাবে এটা পুরণ করব। দিনরাত আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানে যেসব উচ্ছৃঙ্খল কাজ হয়েছে সেটা নিজস্ব তৈরি। বিপরীতমুখী কাজ করলে দেশে কখনো শান্তি শৃঙ্খলা আসবে না। সেটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।
তদন্ত কমিশন হচ্ছে আরেকটা। আমরা কমিশনকে সহায়তা করব। যে ধরণের সাহায্য সহযোগিতা দরকার আমরা চেষ্টা করব। আমরা দেশে একটি ফ্রি ফেয়ার এন্ড ইনক্লুসিভ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। তার আগে যেসব সংস্কার করা দরকার সেগুলোও হবে। আমি যতবারই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, ততোবারই তিনি একটি ফ্রি-ফেয়ার এন্ড ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলেছেন এবং সেটি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চেষ্টা চলছে। সরকার সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে।
ড. ইউনূস যথাসাধ্য চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন। দেশটাকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে। ওনাকে সহযোগিতা ও সাহায্য করতে হবে। উনি যেন সফল হতে পারেন। সেদিকে আমরা সবাই চেষ্টা করব। আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব। আসেন আমরা নিজেদের মধ্যে কাটাকাটি মারামারি না করে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশ ও জাতি যেন একসঙ্গে থাকতে পারি। আমাদের মধ্যে মতের বিরোধ থাকতে পারে। চিন্তা চেতনায় ভিন্নতা থাকতে পারে দিন শেষে যেন আমরা সবাই দেশ ও জাতির দিকে খেয়াল করে এক থাকতে পারি। তাহলে এই দেশটা উন্নত হবে, সঠিক পথে পরিচালিত হবে। নাহলে আমরা আরও সমস্যার মধ্যে পড়তে যাব।
তিনি বলেন, আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি আক্রমণ কইরেন না। আমি দেখতে পাচ্ছি সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের ওপর বিদ্বেষ কারো কারো। অথচ আজ পর্যন্ত আমি কোন কারণ খুঁজে পাইনি। সেনাবাহিনী এমন একটা ফোর্স যেটা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীও। আমাদের আক্রমণ কইরেন না, আমাদের উপদেশ দেন, সহযোগিতা করেন। আক্রমণ কইরেন না। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই। দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে চাই।
সারাবাংলা/ইউজে/ইআ