খান ব্রাদার্সের শেয়ার কারসাজি: এবাদুল চক্রকে ৮৬ লাখ টাকা জরিমানা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪১ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:১৬
ঢাকা: পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ৮ ব্যক্তি ও ৩ প্রতিষ্ঠানকে মোট ৮৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ কারসাজিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিকন ফার্মারসিউটিক্যালস পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এম) মোহাম্মদ এবাদুল করিমসহ তার সহযোগিরা।
২০২৩ সালের ৫ মার্চ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত এবং একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোহাম্মদ এবাদুল করিমসহ তার সহযোগিরা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্টিজের শেয়ারের দাম বাড়ায়। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার ( ২৫ ফেব্রুয়ারি) বিএসটিসি সূত্র সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
শেয়ার কারসাজিতে সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন-এবাদুল করিমের দুই সন্তান, তার তিন প্রতিষ্ঠান এবং চার ব্যক্তি বিনিয়োগকারী। একে অপরের সঙ্গে যোগসাজস করে কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সম্প্রতি বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল- খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বস্ত্র খাতের কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্টিজের শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে সাত ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে মোহাম্মদ এবাদুল করিমকে ৭ লাখ টাকা, তার মেয়ে রিসানা করিমকে ৮ লাখ টাকা, তার প্রতিষ্ঠান বিকন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে ৬ লাখ টাকা, বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড ইমপ্লোয়িজ সিপিএফকে ৭ লাখ টাকা, বিকন মেডিকেয়ারকে ৭ লাখ টাকা, ব্যক্তি বিনিয়োগকারী মো. সোহেল আলমকে ছয় লাখ টাকা, আক্তার হোসেনকে এক লাখ টাকা, মো. মিজানুর রহমানকে পাঁচ লাখ টাকা, মো. নাসির উদ্দিন আকন্দকে এক লাখ টাকা এবং আজাদ হোসেন পাটোয়ারীকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে আলোচ্য সময়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মোট ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে ২০২৩ সালের ৫ মার্চ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে তিন ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে মোহাম্মদ এবাদুল করিমকে ৬ লাখ টাকা, তার মেয়ে রিসানা করিমকে ৬ লাখ টাকা, তার ছেলে উলফাত করিমকে ৬ লাখ টাকা, তার প্রতিষ্ঠান বিকন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে ৬ লাখ টাকা, বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড ইমপ্লোয়িজ সিপিএফকে ৬ লাখ টাকা এবং বিকন মেডিকেয়ারকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেহিসেবে আলোচ্য সময়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মোট ৩৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি বিকন ফার্মারসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এবাদুল করিম। তিনি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তিনি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৫ আসনে নির্বাচিত হন। ওরিয়ন গ্রুপের কোম্পানিগুলোর পর্ষদে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এবাদুল করিমের ছেলে উলফাত করিম। তিনি কোম্পানিটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর তার মেয়ে রিসানা করিম। তিনি কোম্পানিটির ম্যানেজমেন্টে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি করার দায়ে মোহাম্মদ এবাদুল করিমকে বড় অংকের জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী নুরুন নাহার, তার মেয়ে ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বড় অংকের জরিমানা করা হয়।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোহাম্মদ এবাদুল করিমসহ সাত ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠান যোগসাজশ করে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্টিজের শেয়ার লেনদেন করে। কারসাজিকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার যোগসাজস করে দাম বাড়ায়। আলোচ্য সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ২০.৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬২ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ওই মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ৭২ টাকায় অবস্থান নেয়। ফলে আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫১.৭০ টাকা বা ২৫৪.৬৮ শতাংশ বেড়ে।
এছাড়া ২০২৩ সালের ৫ মার্চ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত সময়ে মোহাম্মদ এবাদুল করিমসহ তিন ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠান যোগসাজশ করে একই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায়। আলোচ্য সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০.২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৯.৩০ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ওই মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ৩৮.৯০ টাকায় অবস্থান নেয়। ফলে আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ২৮.৭০ টাকা বা ২৮১.৩৭ শতাংশ বেড়ে।
কারসাজিতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত
২০২৩ সালের ৫ মার্চ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত এবং ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্টিজ লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি করে সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) ও ১৭(ই)(২)(৫) লঙ্ঘন এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) লঙ্ঘনের দায়ে বিকন ফার্মারসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এবাদুল করিম, তার দুই সন্তান, তার তিন প্রতিষ্ঠান এবং চার ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে।
এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) লঙ্ঘনের দায়ে মো. নাসির উদ্দিন আকন্দ ও আজাদ হোসেন পাটোয়ারীকে সতর্ক করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/ইআ