বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও দাম বাড়ালে বাঁচবে ১৭ লাখ প্রাণ
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৩২ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৩৯
ঢাকা: আসন্ন ২০২৫-২৬ বাজেটে তামাকপণ্যের ওপর কার্যকর করারোপ ও দাম বাড়ানো হলে ৬৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব। এতে ১৭ লাখ মানুষের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন ২০২৫-২৬ বাজেটে তামাকজাত পণ্যের কর ও মূল্য বৃদ্ধির আবশ্যকতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে তামাকজাত পণ্যের কার্যকর করারোপ ও মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক দাবি তুলে ধরা হয়। বর্তমানে বাজারে নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও অতি উচ্চ- এই চার স্তরের সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। আসছে অর্থবছরে নিম্ন ও মধ্যম- এই দুটি স্তরকে একিভূত করে একটি নতুন স্তর তৈরি করে মোট স্তরের সংখ্যা তিনটিতে নামিয়ে আনা হবে। এই নতুন তিন স্তরের সিগারেটের দশ-শলাকার একেকটি প্যাকেটের দাম যথাক্রমে ৯০ টাকা, ১৪০ টাকা ও ১৯০ টাকা ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়।
এ সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাক্সিন অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভী) চেয়ার ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ জানান, টোব্যাকো এটলাস ২০১৮-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করেন। সে হিসেবে প্রতিদিন ৪৪২টি প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। তামাকের কারণে বিভিন্ন রোগ যেমন- হৃদরোগ, ফুসফুস, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসরোগ, ক্যান্সার, কিডনি রোগ এবং আঘাতজনিত রোগ ক্রমেই বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট রোগের কারণে তরুণ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা অকালেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এই অকাল মৃত্যু কমাতে বর্তমান সরকারকে এখনই তামাকজাত পণ্যের ওপর কার্যকর করারোপ এবং দাম বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পলিসি অ্যাডভাইজর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যেখানে তামাকপণ্যের ওপর কার্যকর করারোপ করা জরুরি সেখানে তামাক কোম্পানিগুলোর নানা রকম মিথ্যাচারের মাধ্যমে এটিকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তামাকপণ্যের ওপর অতিরিক্ত করারোপ ও দাম বাড়ালে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে বলে তামাক কোম্পানি প্রচারণা চালাচ্ছে, যা মোটেও যুক্তিসংগত নয়।’
তিনি বলেন, ‘আসন্ন ২০২৫-২৬ বাজেটে তামাকপণ্যের ওপর কার্যকর করারোপ ও দাম বাড়ানো হলে ৬৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব, ১৭ লাখ মৃত্যু রোধ করা সম্ভব, ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে ধূমপান থেকে বিরত রাখা সম্ভব এবং ১৭ লাখ তরুণকে ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব।
গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো জরিপের তথ্যমতে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশে ধূমপান আসক্ত কিশোর-কিশোরীর হার সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে প্রায় ১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকজাত পণ্যের কর ও দাম বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা, যা ঐ বছর তামাক পণ্য বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের তুলনায় প্রায় ৩৪ শতাংশ বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ থেকে তার ঊর্ধ্বে সিগারেট ব্যবহারের হার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। সিগারেটের ক্রয় ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে গেলে তামাকের ব্যবহার কমে আসবে বলে মনে করেন তারা।
সারাবাংলা/এমএইচ/এমপি