স্টক মার্কেট স্বচ্ছভাবে চললে সাধারণ মানুষও এখানে বিনিয়োগ করবে: আমীর খসরু

বুধবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ভবনে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নিয়ন্ত্রণমুক্ত ছাড়া পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিজেরাই এটি নিয়ন্ত্রণ করবে। আর স্টক মার্কেট স্বচ্ছভাবে চললে সাধারণ মানুষও এখানে বিনিয়োগ করবে।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ক‍্যাপিটাল মার্কেটের বর্তমান অবস্থা ও এগিয়ে যাওয়ার উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ভবনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাপিট্যাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) এর সভাপতি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সারাবাংলা ডটনেটের হেড অব নিউজ গোলাম সামদানী ভূঁইয়া।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমি বক্তৃতার জন্য বলছি না, আমাদের দলে অভ্যন্তরীণ আলাপ হয়েছে, আমরা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে সিরিয়াসভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। স্টক মার্কেট যদি স্বচ্ছভাবে চলে, তাহলে সাধারণ মানুষও মনে করবে যে, এখানে বিনিয়োগ করা যায়। সবাই তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের জন্য বিনিয়োগ করবে। স্টক মার্কেটের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটা ব্রোকারেজ হাউজে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের অনেক বড় চাকরির সুযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কেউ কখনো স্টক মার্কেটকে বরণ করতে পারেনি। স্টক মার্কেট যে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, এটা কেউ বোঝেনি। অর্থনীতি চালাতে স্টক মার্কেট যে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে সেটা আমরা ধারণ করতে পারিনি। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আগামীতে যদি নির্বাচিত সরকার আসে, আর আমরা সেই সুযোগ পাই, তাহলে আমরা স্টক মার্কেটকে ধারণ করবো।

‘গত ১৫ বছর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে স্টক মার্কেটকে ব্যবহার করা হয়েছে’- এমন অভিযোগ তুলে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএসইসিতে কোনো সরকারের নাক গলানোর সুযোগ নেই। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা। বিগত দিনে যা হয়েছে, বিএসইসি কমিশন হিসেবে নয় বরং রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করেছে।

তিনি আরও বলেন, আর যারা পুঁজিবাজার লুটপাট করেছে, তাদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে তারাই ঘুরেফিরে আবারও পুঁজিবাজারে এসব কর্মকাণ্ড চালাবে। কারণ দিন শেষে টাকা কথা বলে। তাদের লুটপাটের কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেছে, অনেকে নিঃস্ব হয়েছে। তাই তাদের আইনের আওতায় আনতে ডিবিএকেও ভূমিকা রাখতে হবে।

বুধবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ভবনে ‘বাংলাদেশ ক‍্যাপিটাল মার্কেটের বর্তমান অবস্থা ও এগিয়ে যাওয়ার উপায়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজার অনেক সমস‍্যায় জর্জরিত হয়েছে। এর মধ‍্যে ২০১০ সালের ধসের পর অলিখিতভাবে ফোর্সড সেল বন্ধ করে ও করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ফোর্সড সেল বন্ধ করে নেগেটিভ ইক‍্যুইটি তৈরি করা হয়েছে। এতে করে অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদানের সক্ষমতা হারিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে।

অন‍্যদিকে ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারবাজারকে দেড় বছর স্থবির করে রাখা হয়েছিল- উল্লেখ করে ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। যার মাধ‍্যমে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজার থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মাধ‍্যমে আস্থা নষ্ট করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত দুটি কমিশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শোনা যায়। এখন তো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে কখনো হয়নি। এর মাধ্যমে বাজারে আস্থা নষ্ট হয়েছে। এছাড়া কারসাজির অনেক ঘটনা ঘটেছে। আর বিতর্কিত রোড শো করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমেও আস্থা নষ্ট করা হয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/আরএস

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) পুঁজিবাজার ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী