সাজেকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট স্থাপনের আশ্বাস সুপ্রদীপ চাকমার
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩২ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৫
রাঙ্গামাটি: জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্রে ফায়ার সার্ভিসের একটি বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেছেন, সাজেক ভ্যালিতে ফায়ার সার্ভিসের একটি বিশেষ ইউনিট করার জন্য আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করব।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এখানে যে পরিমাণ পানির সমস্যা সেটার নিরসন নিয়েও কাজ করা হবে। সাজেকে আগুনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের এই এলাকায় কিছু হওয়া মানে অর্থনীতিতে যে কী পরিমাণ ক্ষতি হলো! সেটা অনুমান করতে পারছি না।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এখানে এসে কটেজ মালিক সমিতির নেতাদের কথা হয়েছে। তাদের জন্য করপোরেট লোনের (ঋণ) ব্যবস্থা করে দিতে বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলব। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে খাদ্য সহযোগিতার চিন্তা-ভাবনা করছি। আমি ঢাকায় গিয়ে তাদের জন্য কিছু চাল-ডাল পাঠিয়ে দেব।’

সাজেকে অগ্নিকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা
সাজেক ভ্যালিতে স্থানীয় ত্রিপুরা-লুসাইদের ঘরবাড়ি ও কটেজ-রিসোর্টসহ ৯৮টি স্থাপনার পুড়ে যাওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে উপজাতীয় শরণার্থীবিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, সাজেক ভ্যালিতে আগুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. মোবারক হোসেন, কমিটির সদস্য সচিব ও বাঘাইছড়ির ইউএনও শিরীন আক্তার, সাজেক কটেজ-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেববর্মণ, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন
এর আগে, দুপুরে সাজেকের রুইলুই এলাকায় ভয়াবহ আগুনের উৎস উদ্ঘাটন ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান সদস্যদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটনে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেন। তবে আগুনের উৎস সম্পর্কে তদন্ত কমিটি স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও রাঙ্গামাটি জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘ইকো ভ্যালি রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এবং এটার সম্ভাব্য অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। তবে সবগুলো কারণ খতিয়ে দেখা হবে।’
প্রশাসনের সহায়তা
এর আগে, সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬টি ত্রিপুরা ও লুসাই পরিবারকে নগদ অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন। সাজেক ভ্যালির শিবমন্দির প্রাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন রাঙ্গামাটির স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. মোবারক হোসেন। এ সময় বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কমিটির সদস্য সচিব শিরীন আক্তারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ত্রাণ সহায়তা হিসেবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে নগদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা, ৩০ কেজি চাল, শুকনো খাবার ও কম্বল দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত রিসোর্ট-কটেজ মালিকদেরও নগদ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। বাঘাইছড়ির ইউএনও ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব শিরীন আক্তার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আপাতত আর্থিকসহ নানা সহায়তা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কেউ বাদ পড়লে তাদেরকেও সহায়তা করা হবে।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাজেক ভ্যালিতে ভয়াবহ আগুনে কটেজ-রিসোর্ট, স্থানীয়দের বসতবাড়িসহ ৯৮টি স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরমধ্যে ৩৬টি বসতঘর স্থানীয় লুসাই ও ত্রিপুরাদের। গত দুদিন আগুনে বসতঘর হারিয়ে লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রায় ২ শতাধিক মানুষ গির্জা ও মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন।
সারাবাংলা/এইচআই
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা রাঙ্গামাটি সাজেক সাজেকে অগ্নিকাণ্ড সুপ্রদীপ চাকমা