তিন হাজার সূর্যমুখী ফুলে লেখা ‘অমর ২১’
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:০২ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:০০
রাজশাহী: ঢাকার পরে রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল ভাষা আন্দোলন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে লন্ঠন, মশাল আর হারিকেন জ্বালিয়ে রাজশাহী কলেজের ছাত্ররা সারারাত জেগে রাজশাহী কলেজ হোস্টেলের মাঠে ইট ও কাদা দিয়ে বানিয়েছিলেন স্মৃতিস্তম্ভ। নির্মাণ শেষে শহিদ মিনারের নামকরণ করা হয়েছিল ‘শহিদ স্মৃতি স্তম্ভ’। শহিদ মিনারের গায়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ‘সুপ্রভাত’ কবিতার অমর ২ চরণ। কিন্তু আন্দোলনের প্রথম শহিদ মিনারের স্বীকৃতি আজও মিলেনি।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে খোলা আকাশের নিচে এমন অমর একুশ দেখা গেল রাজশাহী কলেজে। বায়ান্নোতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য এ কলেজ প্রাঙ্গণে গড়ে উঠেছিল আন্দোলন। সেই কলেজে অমর একুশ দেখতে এসেছিলেন ভাষা সংগ্রামী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। সবুজ পাতার গালিচা। তার ওপরে হলদে ফুলে লেখা ‘অমর ২১ ’। সেই লেখাটিকে আবার সাজানো ফুলে, পাতায়।
পূর্ব বাংলায় মাতৃভাষা বাংলার জন্য আন্দোলনে ছাত্রসমাজের বাইরেও অংশ নিয়েছিলেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছিলেন হাজারো কৃষক। সেই কৃষকের অবদান ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগটি নেন রাজশাহীর কৃষক মনিরুজ্জামান মনির। মূলত ২১ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরেই তার এই পরিকল্পনা।
আয়োজক কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভাষা-সংগ্রামের ইতিহাস এবং তাৎপর্য ও কৃষকের অবদান সবাইকে জানাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত ২১ ফেব্রুয়ারি আয়োজনটি করার ইচ্ছে থাকলেও সেদিন ফুলগুলো পূর্ণতা পেয়েছিল না। তাই কয়দিন পরে এ ফেব্রুয়ারিতেই ফুটিয়ে তোলা হলো অমর একুশ।’
সুনিপুণ হাতে কলেজের কংক্রিটের ওপর ৩০ হাজার সূর্যমুখী ফুলে অমর একুশ ফুটে ওঠার সে খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। যা একনজর দেখতে ভিড় জমান অনেক দর্শনার্থী। তারা ফুল দিয়ে তৈরি ‘অমর ২১’-এর সঙ্গে নিজেদের ফ্রেমবন্দী করার পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনের শহিদদের অবদানকে স্মরণ করেন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গেই।
ব্যতিক্রমী এ আয়োজন দেখতে এসেছিলেন বায়ান্নোতে রাজশাহীতেই ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়া ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জিও। তিনি জানালেন নিজের অনুভূতিও। এই ভাষাসৈনিক বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষার জন্য রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান কম নয়। ঢাকার পরেই আমরা রাজশাহীতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। ঢাকার রাস্তায় গুলি চললে আমরাই প্রথম এই কলেজে রাতারাতি শহিদ মিনার নির্মাণ করেছিলাম। আমাদের চাওয়া, এই শহিদ মিনারটিকে যেন দেশের প্রথম শহিদ মিনারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।’
আয়োজককে ধন্যবাদ জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মু. যহুর আলী বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজন আমাদের ভাষা-সংগ্রামের ইতিহাস ও মর্যাদাকে সমুন্নত করে। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক মনিরুজ্জামান এ আয়োজন করেছেন। এ জন্য তার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা।
সারাবাংলা/এসআর
২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহিদ মিনার ভাষা আন্দোলন রাজশাহী সারাবাংলা সূর্যমুখী ফুলে ‘অমর ২১’