গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদকে ‘নব্য ফ্যাসিবাদ’ আখ্যা দিয়ে রাবির ২ শিক্ষার্থীর পদত্যাগ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:১০
রাবি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য আত্মপ্রকাশ করা সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ’ কে ঢাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রিক নব্য ফ্যাসিবাদ বলে আখ্যা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই শিক্ষার্থী। ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও অঞ্চলকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন হয়েছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপকমিটি গঠিত হয়েছে, সর্বশেষ পিএসসি-ইউজিসিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব কিছুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকাকেন্দ্রিক একচ্ছত্র আধিপত্য আমরা লক্ষ্য করেছি। ঢাকার বাহিরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও অঞ্চলকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, গতকাল ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ’ এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমাদের সম্মতি ছাড়াই আমাদের কয়েকজনকে বিভিন্ন পদে রাখা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে আমরা এ প্লাটফর্মটিকে ধারণ করতে পারছি না। নতুন বন্দোবস্তের নামে ঢাকা ও ঢাবিকেন্দ্রিক নয়া ফ্যাসিবাদী মনোভাবের যে উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার প্রতিবাদেই আমরা এই প্লাটফর্মে থাকতে রাজি না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্টেইকদেরকে বিপ্লব পরবর্তী সময় থেকে যেভাবে বিভাজন করা হয়েছে সেই বিভাজনের রাজনীতিতে আমাদের পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। শত চেষ্টা করেও যখন নয়া বন্দোবস্তের নাম নেওয়া কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে আমাদের মৌলিক কিছু দাবি পূরণ করতে পারি নাই, তখন আমাদের জন্য এমন ব্যানারে নিজেদেরকে জড়ানো সমীচীন নয়।
লিখিত বক্তব্যে আম্মার আরও বলেন, আমাদের স্পষ্ট বার্তা হলো ঢাকা ও ঢাবিকেন্দ্রিক ফ্যাসিবাদী মনোভাব থেকে বেরিয়ে যতদিন না এই দলের অংশীজনরা বিকেন্দ্রীকরণের দিকে মনোনিবেশ করবে, ততদিন অবধি আমরা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় যেতে আগ্রহী না। আর তাই উক্ত পদগুলো থেকে আমরা সবাই পদত্যাগ করলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেটের বাহিরে গিয়ে আমাদের পক্ষে কোনো দল, গোষ্ঠী কিংবা প্রেসার গ্রুপে নিজেদেরকে একীভূত করা যুক্তিযুক্ত মনে করছি না। আমরা এমন একটি প্লাটফর্ম চাই যেখানে সর্বস্তরের আপামর ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বার্থে সুস্থধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবে। অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো প্লাটফর্মে আমরাও যুক্ত হতে চাই।
‘নতুন কোনো দলে নিজেদের সম্পৃক্ত করবেন কি না’ এমন প্রশ্নের জবাবে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী সজিব বলেন, ফ্যাসিবাদী চিন্তা থেকে বের হয়ে দেশে বিকেন্দ্রীকরণের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যদি কোনো প্লাটফর্ম তৈরি হয় তখন আমরা ভেবে দেখবো। আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি কিন্তু এখন আমরা নিজেরাই বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউজিসি ও পিএসসিতে সদস্য নিয়োগের দাবিতে আমরা মানববন্ধন করেছি সংবাদ সম্মেলন করেছি। কিন্তু সরকার বা উপদেষ্টা পরিষদে যাদের কর্ণপাত করা দরকার তারা আমাদের বিষয়টি আমলে নেয়নি। তাই আমরা আপাতত কোনো এককেন্দ্রিক ফ্যাসিবাদী প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হতে রাজি নই।
সারাবাংলা/এনজে