রমজানের পণ্যের দাম স্থিতিশীল, মাছ-মাংসের বাজারে আগুন
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:২৮
ঢাকা: সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও পবিত্র রমজান সামনে রেখে রাজধানীর কাঁচাবাজারে যেমন বেড়েছে ক্রেতা সমাগম, তেমনি বেড়েছে মুরগি, মাছ ও মাংসের দাম। সেইসঙ্গে বাজারে রয়েছে সয়াবিন তেল সংকট। তবে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য খেজুর, ছোলা, চিড়া, মুড়ির দাম রয়েছে স্থিতিশীল। এতে কিছুটা স্বস্তিতে নগরবাসী।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানী কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
বনানী কাঁচাবাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাজারে চাহিদা বেড়েছে ছোলা, বুট, চিনি ও সরবতসহ রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যের। এ বছর রমজান ঘিরে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো অনেকটাই স্থিতিশীল। তবে কাটেনি ভোজ্যতেলের সংকট।
বিদেশি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া বুটের বেসন ১০০-১৩০ টাকা, খোলা আটা ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্যাকেট আটা ২ কেজি ১০০ টাকা, খোলা চিনির কেজি ১২০ টাকা, দেশি চিনি ১২৫ টাকা, সয়াবিন এক লিটার ১৭৫ টাকা, দুই লিটার ৩৫০ টাকা ও ৫ লিটার ৮৫০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৩৫ টাকা ও ভারতীয় মসুর ডাল ১১০ টাকা। এদিকে খেজুর বিক্রি হচ্ছে রকমভেদে সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৬০০ টাকা কেজিদরে।

ছোলা, বুটের বাজার।
মুদি ব্যবসায়ী বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোরের মালিক মোহাম্মদ হুসাইন জানান, বাজারে রমজানের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় এসব পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে সংকট তেলের। ডিলাররা তেল দিতে পারছে না। ফলে আমাদের কাছে সরবরাহ না থাকায় ক্রেতাদের দিতে পারছি না। প্রতিদিন যেখানে ২ থেকে ৫ কার্টুন তেলের চাহিদা সেখানে ৪/৫ দিন পর ডিলাররা দিচ্ছে মাত্র এক কার্টুন তেল। ৫ লিটার তেলের কোনো সরবরাহ নাই। তবে ১ ও ২ লিটার তেল রয়েছে। তাও অনেক কম। এতে বাজারে তেলের সঙ্কট বেড়েছে।
বাজার করতে আসা নিলুফার আক্তার জানান, রমজানের বাজার করতে এসে দেখলাম দাম বেশি না। তবে তেল পাওয়া যাচ্ছে না ঠিক মতো। কয়েক দোকান ঘুরে ৫ লিটারের বোতল পাওয়া যায় নি। পরে ছোট গুলো কিনেছি।
এদিকে বনানী কাঁচাবাজারের ফাতেমা চিকেন হাউসের মুরগি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সুজন বলেন, এ সপ্তাহে বেড়েছে সব ধরণের মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি ২১০-২২০ টাকা কেজি, দেশি ৬৫০ টাকা, সোনালী ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৮০০ টাকায় গরুর মাংস আর খাসির মাংস ১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, ডিম ১৩০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে মাছের বাজারেও যেন আগুন। মাছ ব্যবসায়ী তুলসী দাস জানান, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে মাছের বাজার অস্থিতিশীল। পাঙ্গাশ ২৪০ টাকা, বোয়াল ৫০০ টাকা ও বড় রুই মাছ ৪৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরেক মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কাজল মিয়া জানান, বড় মাছের থেকে দাম বেশি ছোট মাছের। দেশি ছোট পুটি ৬০০ টাকা কেজি, কাচকি ৫৫০-৬০০, ইন্ডিয়ান ৪০০, মলা মাছ ৪০০ টাকা, দেশি টেংরা ৭০০-৮০০ টাকা, দেশি কৈ ১৫০০ টাকা আর চাষের কৈ ৪০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।
মোহাম্মদ মাহেলা আলী জানালেন আজ গরুর মাংস কিনলাম ৮০০ টাকাতে, যা কয়দিন আগে কিনেছি ৭৫০ টাকায়। রমজান উপলক্ষে এমন বাড়িয়ে বিক্রি করলে আমরা চলবো কি করে। যেখানে রমজান উপলক্ষে দাম কমবে, সেখানে দাম আরও বাড়ছে। এজন্য দরকার সঠিক মনিটরিং।
এদিকে, সরকারি চাকরিজীবী লতিফ আক্তার বললেন, রমজান এলে আমাদের বাজেট একেবারেই সমন্বয় করা মুশকিল হয়ে যায়। বিশেষ করে আমরা যারা নির্ধারিত বেতনে সরকারি চাকরি, তাদের জন্য রমজানের মাসে খরচ হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়।
সপ্তাহের বাজারে এবার যোগ হয়েছে রমজানের বাজার তাই রমজানে ইফতার ও সেহরি মিলিয়ে মাসের বাজার বাজেটের মধ্যে রাখা যায় না- এমন কথা বলেছেন সোনিয়া আক্তার। এদিকে চালের বাজারও বাড়তির দিকে। মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারে চাল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইউসুফ বললেন, চাল কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট ৮০-৮৫ টাকা, আটাশ ৬০ টাকা, পোলাও ১২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে কাঁচাবাজারে পণ্যের সরবরাহ বেশি থাকায় দামও গত সপ্তাহের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বাজারে চোখ রাঙাচ্ছে লেবু। ১০০ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে লেবু। এছাড়া অন্যান্য শাক সবজির মধ্যে প্রতি কেজি টমেটো ৩০ টাকা, দেশি গাজর ৩০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৭০ টাকা, শসা ৪০-৬০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মূলা ২০ টাকা, লাল মূলা ৩০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, পটল ১৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সারাবাংলা/এনএল/এনজে