জীবাশ্ম জ্বালানির নাম ‘কালো মাটি’
১ মার্চ ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১ মার্চ ২০২৫ ০৮:১০
নদী, বিল ও হাওর থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি ‘কালো মাটি’ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয়রা। ছবি: সংগৃহীত
সুনামগঞ্জ: জেলার হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন নদী, বিল ও হাওর থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি ‘কালো মাটি’ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয়রা। মাটির কয়েক ফুট গভীরে খুঁড়ে সংগ্রহ করা কালো মাটি রান্নার কাজে বিকল্প জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। কাঠের লাকড়ি থেকেও জ্বালানি হিসেবে ভালো এই মাটি। অনেকে বলছেন, রান্নায় ভোগান্তি ছাড়া গ্যাসের মতো সহজেই জ্বলে কালো মাটি।
প্রতিবছর উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে ভেসে আসা গাছের পাতা ও ডালপালা নদী, বিল, হাওরের মাটির নিচে চাপা পড়ে। বছরের পর বছর মাটির নিচে থাকা এসব পাতা, ডালপালা মাটির সঙ্গে মিশে জীবাশ্ম জ্বালানিতে পরিণত হয়। শত শত বছর ধরে গাছের এসব অংশ মাটির নিচে পচে কালো নরম হয়ে থাকে। বিগত কয়েক বছর ধরে স্থানীয়রা শুষ্ক মৌসুমে ৭ থেকে ৮ ফুট মাটি খুঁড়লেই বেড়িয়ে আসে গুপ্তধনের মতো লুকায়িত জীবাশ্ম জ্বালানি ‘কালো মাটি’।
এসব কালো মাটি সংগ্রহ করার পর এক সপ্তাহ সূর্যের আলোতে ভালোভাবে শুকিয়ে রান্নার জ্বালানির উপযোগী করা হয়। শুষ্ক মৌসুমের ২০ থেকে ২৫ দিন মাটি তুলে এক বছরের জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারেন তারা। এই মাটি দেখতে কিছুটা কয়লার মতো। তবে কয়লা অনেক শক্ত হয়। আর এই মাটি কয়লার থেকে কিছুটা নরম। এগুলো সংগ্রহ করতে গিয়ে গাছের কাণ্ড, শাখা, প্রশাখাও পাওয়া যায় অনেক সময়।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের কুমড়ি আইল গ্রামের সামনে দেখা যায় দলবেঁধে নারী-পুরুষ মাটি খুঁড়ছেন। কোদাল, শাবল দিয়ে একেজন পাঁচ থেকে ছয় ফুট গর্ত করে কালো মাটি তুলছেন। এসব মাটি তুলে পাশেই ছোট ছোট টুকরা করে রোদে শুকাতে দিয়েছেন।
কুমড়িআইল গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব শেখ আব্দুল হান্নান সারাবাংলাকে বললেন, ‘এই এলাকায় ছোটবেলা অনেক গাছ পালা দেখেছি। আমাদের মুরব্বিদের কাছে গল্প শুনেছি, এখানে জঙ্গল ছিল। এখন কিছুই নেই। তবে সাত থেকে আট হাত মাটি খুঁড়ে একই জায়গায় কালো মাটি পাচ্ছি। এগুলো জ্বালানি হিসেবে খুবই ভালো। সাধারণ লাকড়ি থেকে এগুলো জ্বলে ভালো। রান্নাও হয় দ্রুত।’
একই গ্রামের বাসিন্দা দেবেস রঞ্জন দাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্যাসের মতো কালো মাটির আগুন। জ্বালিয়ে দিলেই হয়। জ্বালানিও কম লাগে। দ্রুত সময়ে রান্না হয়ে যায়। কয়েকদিন ধরে বাড়ির সামনে নালায় মাটি খুঁড়ছি। এই কালো মাটি পেতে সাত থেকে আট হাত মাটি খুঁড়তে হয়। সারাদিন এই কাজ করি। এই মৌসুমে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন কাজ করতে পারলে একবছরের জন্য জ্বালানির চিন্তা করতে হবে না।’
ওই এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না দাস সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কালো মাটি তোলার সময় খুবই নরম থাকে। এগুলো টুকরো টুকরো করে রৌদে শুকাতে দিই। ভালো রোদ হলে এক সপ্তাহে শুকিয়ে যায়। নয়তো পনেরো বিশ দিন লাগে শুকাতে। এই কাজে প্রচুর পরিশ্রম আছে। যারা পরিশ্রম করতে পারেন তারাই এই কাজ করছেন।’
সারাবাংলা/পিটিএম