‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে’
১ মার্চ ২০২৫ ০৯:৪৭
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে জলবায়ু বিপর্যয়ে নারীর উপর অভিঘাত মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভা
ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এবং এই কারণকে কেন্দ্র করেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ছে- বাল্যবিয়ে, ডির্ভোস, নারী নির্যাতন ও যৌতুক।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে জলবায়ু বিপর্যয়ে নারীর উপর অভিঘাত মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা একথা বলেন।
বক্তারা বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে আলাদা কক্ষ না থাকায় কিশোরীরা যৌন সহিংসতার শিকার হয়। বিশুদ্ধ পানির অভাবে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত পানির এলাকার মেয়েরা স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে, দূরবর্তী এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে নারীরা ধর্ষনের শিকার হচ্ছে- এসকল অভিঘাত মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে তারা বিভিন্ন দিক নিদের্শনা তুলে ধরেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পারভীন ইসলাম। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ৩১ টি জেলা শাখা থেকে আগত সংগঠকবৃন্দ। মুক্ত আলোচনা শেষে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ উপস্থাপন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম।
স্বাগত বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে প্রকৃতি ও মানুষ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে এই কথা দশকের পর দশক ধরে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে মানুষ ও প্রকৃতি এই বিপন্নতার মধ্যে আছে। পরিবেশ বিপর্যয় মানুষের জন্য হচ্ছে, কাজের মানুষকেই এই বিপর্যয় রোধে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত নারী, শিশু এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী নির্বিশেষে নারীর জন্য এলাকাভেদে অনেক বেশি অসমতা বৃদ্ধি করছে। এই পরিস্থিতিতে জলবায়ু বিপর্যয়ে নারীর উপর অভিঘাত মোকাবেলায় কেন্দ্র ও জেলা কমিটির উদ্যোগে সম্মিলিতভাবে করণীয় নির্ধাণের জন্য আজকের সভার আয়োজন করা হয়েছে।
অ্যাড. মাসুদা রেহানা মুক্ত আলোচনার সারসংক্ষেপ উপস্থাপনকালে জলবায়ুর কারণে সৃষ্ট অভিঘাতে নারীর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণ, বর্জ্যব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা এবং এলাকাভিত্তিক জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলায় গবেষণা করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবেলায় পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। জলবায়ুর অভিঘাতে নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষার উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হচ্ছে, দারিদ্র্যতা বাড়ছে, নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। এমতাবস্থায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম, অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সার্বিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রেখে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করে নারীর মানবাধিকার রক্ষায় সাংগঠনিক কর্ম্পরিকল্পনা গ্রহণের উপর গুরুত্ব দিতে তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি সক্রিয় করতে হবে ও নারীবান্ধব হতে হবে, নারীর জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। সরকারের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধে, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাগজ ও পাটের তৈরি দ্রব্য ব্যবহারে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে, নদীগুলোকে দখলবাণিজ্য থেকে মুক্ত করতে হবে, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে নারীদের খাপ খাইয়ে চলার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দূর্যোগ-ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, বসতিপূর্ণ এলাকায় পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্য নিষ্কাশনে সচেতন হতে হবে। ভূমিধস রোধে পাহাড় কাটা, টিলা কাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্লাষ্টিকের বর্জ্য রিসাইকিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, পযর্টন এলাকার বর্জ্য রিসাইকিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেত্রীবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, ৩১ টি জেলা শাখার সংগঠকবৃন্দ এবং সংগঠনের কর্মকর্তাসহ প্রায় শতাধিক জন উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এফএন/এনজে