Saturday 01 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনকে উহ্য রাখার চেষ্টা চলছে: সিপিবি

স্পেশাল করেসপডেন্ট
১ মার্চ ২০২৫ ১৭:১০

ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘৯০ এর গণঅভ্যুত্থান দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছিল। কমরেড তাজুলসহ অসংখ্য মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল। আন্দোলনের শেষ দিকে এসে বিজয়ীরা কখনো শুধুমাত্র নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করেনি। আজ দেখছি ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর অনেকে শুধুমাত্র কিছুদিনের আন্দোলনকে সামনে আনছেন। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনকে উহ্য রাখার চেষ্টা চলছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১ মার্চ) সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনের সামনে ‘৯০ এর আন্দোলনের অন্যতম শহিদ তাজুল ইসলাম স্মরণে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে সিপিবিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিরা পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের নায়ক সাধারণ মানুষ। তারা তাদের জীবন দিয়ে সংগ্রাম করে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে। আর সুবিধা নিয়ে যায় শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দলগুলো। এ অবস্থার পরিবর্তন করে নিজেদের রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসানোই যেন প্রধান কাজ।’

তিনি বলেন, ‘‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে বামপন্থি গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল সংগঠন, শ্রেণি পেশার মানুষ ও বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিয়ে নয়া যুক্তফ্রন্ট গড়ে তোলে মানুষের মুক্তির আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘দেশের মানুষের মুক্তির লড়াইকে অগ্রসর করতে গেলে এক ঝাঁক নিবেদিত প্রাণ মানুষ দরকার। এই সংগ্রামের একজন হয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কমরেড তাজুল তার জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন মানব মুক্তির সংগ্রামে। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী সংগ্রামে তিনি শহিদের মৃত্যুবরণ করে দেশবাসীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী হয়েই আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতি ও আত্মত্যাগের অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবেন কমরেড তাজুল।’

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্বপ্ন গণতন্ত্র ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়া। এটি না পারায় ‘৯০ এর গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল। এবার আবার ‘২৪ এ গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হলো। এ সময় ক্ষমতায় থাকা শাসকগোষ্ঠীকে এই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। এই অবস্থা পরিবর্তনে শুধুমাত্র দুঃশাসকের অবসান নয়, দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। এর জন্য পুরো ব্যবস্থা বদল করার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে। সিপিবি শোষণমুক্ত সমাজ তথা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন করতে চায়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন রুখে দাঁড়ানো এবং সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা ছাড়া মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যাবে না। আজ অনেকে সংস্কারের নানা কথা বললেও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন প্রতিরোধে নীরব থাকছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশি-বিদেশি শাসকগোষ্ঠী এ দেশে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির উত্থান ঠেকাতে চায়। এ জন্যে প্রচার মাধ্যমসহ নানা মাধ্যম ব্যবহার করে বামপন্থিদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ঘোষণা করে চলছে। তারা মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার কথা বলে এমন কিছু কথা সামনে আনে, যাতে মানুষের মধ্যে প্রথমে বিভ্রান্তি তৈরি করে এবং পরে মানুষকে হতাশ করে।’

তিনি এই অবস্থা উত্তরণে দেশ ও দেশের মানুষের সংকট দূর করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ‘৯০ এর গণঅভ্যুত্থান ও ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে সচেতন দেশবাসীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ দেশব্যাপী আহূত শিল্প ধর্মঘট ও হরতালের সমর্থনে আগের দিন মধ্যরাতে আদমজী জুটমিল এলাকায় কমরেড তাজুলের নেতৃত্বে শ্রমিকরা প্রচার মিছিল বের করলে হামলায় কমরেড তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। ১ মার্চ ভোরবেলা গুরুতর আহত অবস্থায় কমরেড তাজুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এইচআই

৯০ এর গণঅভ্যুত্থান কমরেড তাজুল সিপিবি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর