ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের জয়যাত্রা
২ মার্চ ২০২৫ ২০:২৯
ঢাকা: একটা সময় ছিলো, যখন ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের উপস্থিতির কথা ভাবাই যেত না। বলা যায়, মেয়েদের জন্য খেলাধূলার তেমন কোনো আয়োজনও হত না। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন আর নারীরা শুধু মাত্র সাঁতার বা দৌঁড় প্রতিযোগিতাতেই থেমে নেই। সময়ের সেই পালাবদলে, ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল, হকি,আর্চারি, শুটিং, টেনিস প্রায় সব ক্যাটাগরিতেই নারীদের উপস্থিতি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সাফল্য।
হ্যান্ডবলে বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৮ ছেলেদের কোচ হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ডালিয়া আক্তার। এর আগে ডাগ আউটে ছেলেদের কোচ হয়েও কাজ করেছেন তিনি।
নারী হয়ে ছেলেদের জন্য দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতাটি কেমন- জানতে চাইলে ডালিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘‘নিজেকে তো মেয়ে হিসেবে কখনো ভাবিনি। খেলোয়ার হিসেবে ভেবেছি। আর আমি নারী, এটা ভাবলেই পিছিয়ে পড়বো। ফেডারেশনও এখানে লিঙ্গ ভেদাভেদ করেনি। এই জায়গায় ফেডারেশনকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি যতটুকু জানি, ছেলেদের দলগত বিভাগে কোন নারীই আগে কোচ হতে পারেনি। আমিই প্রথম। এটা আমার জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি গর্বের বিষয়।’’
অন্যদিকে ফুটবলে বিগত বছরের সাফল্য দেখতে গেলে, ২০২৪ সালে ফুটবলে বাংলাদেশের নারীরা জিতেছে তিনটি শিরোপা। ২০২৪ এর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। মার্চে নেপালের মাটি থেকে বাংলাদেশ জয় করে আনে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টের ট্রফি। অক্টোবরে বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দল টানা দ্বিতীয়বারের মতো জয় করে সাফ শিরোপা। দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে আনে বাংলার নারীরা।
এ বিষয়ে ফুটবলার আফরোজা খন্দকার ‘সারাবাংলা’কে বলেন, ‘‘ফুটবলার হবো, এই স্বপ্ন অনেক ছোটো থেকেই ছিলো। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো- এটা ভাবিনি। তবে আমি চেষ্টা করেছি। আমিও প্রতিবন্ধকতা পেয়েছি। তবুও খেলে গেছি। এজন্য সফলও হয়েছি। তাই পরবর্তীতে আমি তৃণমূলের নারীদের কোচ হিসেবে কাজ করেছি। তাদের দল গঠন করে দিয়েছি। আর আমার সাফল্য দেখেই কিন্তু অনেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে ফুটবল খেলার প্রতি।’’
কিন্তু সাফল্যের পাশাপাশি ব্যতিক্রমও আছে। আফরোজা খন্দকার বলেন, ‘‘আমার সাথেই ফুটবল খেলেছে এমন অনেকেই, বিয়ের পর আর খেলতে পারেন নি। তাই নতুন নতুন মেধাবী নারী ফুটবলারদের জন্য প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের সুযোগ দিতে হবে। আমি যখন তৃণমূল নারী ফুটবলারদের জন্য কাজ করছিলাম, আমি কিন্তু কিছু সংস্থার মাধ্যমে সামান্য কিছু সুবিধা নিতে পেরেছি। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারিভাবে তৃণমূল নারী খেলোয়ারদের জন্য যদি প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেয়া হয়, তাহলে অনেক মেধাবী ফুটবলার পাবে বাংলাদেশ।’’
এবার ক্রিকেট অঙ্গনের দিকে তাকালেও দেখা যায় যে, বেশ সাফল্য অর্জন করেছে নারী ক্রিকেটাররা। গত বছরে আইসিসি কর্তৃক ঘোষিত বিশ্বকাপের সেরা একাদশে জায়গা করে নেন বাংলার নারী ক্রিকেটার জ্যোতি।
ফিদে ওয়ার্ল্ড র্যাপিড ও ব্লিটজ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪-এ অংশ নিয়ে সাফল্যের দেখা পান দেশের জাতীয় নারী চ্যাম্পিয়ন ও ফিদে মাস্টার নোশিন আনজুম।
নারীদের এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে কাজ করতে হবে বলে মনে করছেন হ্যান্ডবল কোচ ডালিয়া আক্তার। তার মতে,‘‘নারী দিবস আসলেই নারীদের সাফল্য আমরা খুঁজে বেড়াই। কিন্তু আমি মনে করি, একটি দিবস কেন্দ্রীক নয়, বাংলার নারীদের সাফল্য বিশ্ব জানুক সবসময়ই। এজন্য, সবার উদ্যোগ নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “প্রথম উদ্যোগটা নিতে হবে পরিবার থেকে। একজন নারী, যে নারীর স্বপ্ন থাকে খেলোয়ার হওয়ার। সে ফুটবল বা ক্রিকেট কিংবা টেনিস বল নিয়ে খেলছে। নিশ্চই সে চেষ্টা করছে সামনে এগোনোর। কিন্তু তাকে যেনো পরিবার থেকেই থামিয়ে দেয়া না হয়। আর নারীদের মধ্যেও সেই চেষ্টাটা থাকতে হবে যে, নারী বলে যেনো থেমে না যাই। পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি উদ্যোগও থাকতে হবে, যাতে মেধাবী খেলোয়াররা হারিয়ে না যায়। ইভেন্টগুলো প্রতিনিয়ত থাকতে হবে। যে নারী খেলোয়ারটিকে হঠাৎ খেলার মাঝে দেখা যাচ্ছে না, তাকে খুঁজে এনে যেন আবারও খেলাধূলায় সম্পৃক্ত করানো যায়, সেসব উদ্যোগ নিতে হবে।’’
ক্রিড়াঙ্গণে দেশের সুনাম ধরে রাখতে নারী খেলোয়ারদের অবদান রয়েছে অনেক। কিন্তু বেতন বৈষম্য, ও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন তারা। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে তাদের চাওয়া, নারী কিংবা পুরুষ নয়। খেলোয়ার হিসেবে যোগ্যতার মর্যাদাটাই যথাযথভাবে দেয়া হোক ।
সারাবাংলা/এফএন/আরএস