গুলশানে হোটেলে আগুন
ছেলেকে বিদায় জানাতে এসে পৃথিবী থেকে বাবারই বিদায়
৩ মার্চ ২০২৫ ১৮:১৯ | আপডেট: ৩ মার্চ ২০২৫ ১৮:২০
ঢাকা: গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন ছেলেকে বিদায় দিতে। বিশ্রামের জন্য উঠেছিলেন আবাসিক হোটেলে। আর সেখানেই অগ্নিকাণ্ডে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হলো মিরন জমদ্দারের (৫৫)। মিরনের বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার দারুলহুদা বটতলা গ্রামে।
আগামীকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) তার ছেলে মনিম জমাদ্দারের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গুলশানের শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেলের আগুনে ধোঁয়ায় বন্ধ হয়ে মারা গেলেন মিরন। ছেলেকে বিদায় জানাতে এসে নিজেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।
সোমবার (৩ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে মরদেহ চারটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় গুলশান থানা পুলিশ। এদের মধ্যে শুধু মিরনের পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকি তিনজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি।
ঢাকা মেডিকেলে নিহতের ছেলে মনিম জমাদ্দার বলেন, ‘আগামীকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় আমার সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট। দুই দিন আগে আমি রামপুরায় চাচাতো ভাই সাইদুলের বাসায় উঠি। আজ (সোমবার) সকালে বাবা ও মামা হিরন তালুকদার দুজন গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে শাহজাদপুর সৌদিয়া আবাসিক হোটেলের ৪০২ নম্বর রুমে ওঠেন।’
মনিম আরও বলেন, ‘বাবা ও মামার আসার খবর পেয়ে সকালে হোটেলের উদ্দেশে রওনা দিই। কিন্তু হোটেলে ওঠার সময় দেখি নিচ তলায় অনেক ধোঁয়া। পরে বাবাকে ফোন দিই। বাবা ফোন ধরে কান্না করতে থাকেন। তখন তাকে বলি ছাদের দিকে উঠে যেতে। তারপর আর কথা হয়নি।’
নিহতের শ্যালক হিরন তালুকদার বলেন, ‘সকালে হোটেলে ওঠার কিছুক্ষণ পর দু’জন হোটেলের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে যাই। এর পর তিনি আমাকে রেখেই বিশ্রামের জন্য দ্রুত হোটেলে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পরই আগুন দেখে হোটেলের নিচে দৌড়ে আসি। তখন আগুনের ধোঁয়ায় সারা হোটেল আচ্ছন্ন ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ঠিক সেই সময়ই দুলাভাই মিরন আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, আমি হোটেলের ভেতরে আটকা পড়েছি। চারদিকে ধোঁয়া। কোথাও যাওয়ার জায়গা পাচ্ছি না। এই বলেই কান্নাকাটি করছিলেন। এরপরই কলটি কেটে যায়। সবশেষে ফায়ার সার্ভিস আগুন নির্বাপনের পর দুলাভাইয়ের মরদেহ চারতলা থেকে উদ্ধার করে।’
গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ হোসেন জানান, চারটি মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া চলছে। দু’টি মরদেহের শরীরে হালকা দগ্ধ আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘একটি মরদেহের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে। বাকি তিনটি মরদেহ এখনো অজ্ঞাত হিসেবে রয়েছে। তাদের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ বছর।
সারাবাংলা/এসএসআর/পিটিএম