গত রমজানের চেয়ে এবার অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম কম
৩ মার্চ ২০২৫ ২২:০৩ | আপডেট: ৩ মার্চ ২০২৫ ২২:১৮
ঢাকা: রমজান এলেই বাজারে নিত্যপণ্যের দামে অস্থিরতা তৈরি হয়। মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে এই সময়ে। কিন্তু এবারের রোজায় বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এবার পণ্য কিনতে গিয়ে আগের মতো আর হিমশিম খেতে হচ্ছে না সাধারণ মানুষকে- এমনটাই বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। দুয়েকটি বাদে গত রমজানের চেয়ে এবার বেশিরভাগ পণ্যের দামই কমেছে। ফলে অনেকটা স্বাচ্ছন্দেই বাজার সারছেন সাধারণ মানুষ।
সোমবার (৩ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, শেওড়াপাড়া বউ বাজার, মিরপুর-১ শাহ আলী বাজার ও মিরপুর-৬ কাঁচা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বেশিরভাগ সবজি নাগালের মধ্যে
আলু, বেগুন, টমেটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়োসহ সজবি জাতীয় পণ্যের দাম ক্রেতাদের হাতের নাগালেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা। শেওড়া পাড়ায় আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজিতে। তবে দেশি ছোট আলুর কেজি ৩০ টাকা। গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি, আর মোটা লম্বা বেগুন ৫০-৬০ টাকা কেজি। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি, শসা ৫০ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ো ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর সবচেয়ে ভাইরাল পণ্য লেবুর হালি ৬০ টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজিতে।
সবজি ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবরকম সবজির দাম কম। রোজায় মানুষ সবজি কম খায় তাই বিক্রিও অনেক কম। লেবু, শসা, গাজর বেশি কেনে- তারপরও দাম বেশি না। গত বছর দাম এর চেয়ে অনেক বেশি ছিল।’
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, মিরপুর-১ শাহ আলী মার্কেট ও মিরপুর-৬ কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশি ঝালের কাঁচা মরিচের দাম ৭০ টাকা কেজি। তবে ৫০-৬০ টাকা কেজিও বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও। শাহ আলী মার্কেটে টমেটো ২ কেজি নিলে ৩০ টাকা রাখা হচ্ছে। আর এক কেজির দাম ২০ টাকা। শসা ৪০ টাকা, খিরা ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। লেবু বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ৪০ টাকা থেকে ৮০ টাকা হালি।
২০২৪ সালের চিত্র
সংবাদপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের রমজানে বেগুনের দাম ছিল ১২০-১৫০ টাকা। এমনকি কোনো কোনো বাজারে ২০০ টাকাও বিক্রি হয়েছে বেগুন। আলুর দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা কেজি। যা পরবর্তী সময়ে ৫০-৭০ টাকায় উঠে যায়। টমেটোর দাম ছিল ৫০-৮০ টাকা কেজি। শসা ছিল ৮০-১০০ টাকা, আর খিরা ছিল ৬০-৮০ টাকা কেজি। লেবুর হালি ছিল ১২০-১৫০ টাকা। এমনকি কোনো কোনো বাজারে লেবু ২০০ টাকা হালিও বিক্রি হয়েছে বলে গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১০০-১২০ টাকা কেজি।
রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী
রান্নার কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মরিচ রাজধানীতে বাজার ভেদে একটু দাম কমবেশি থাকলেও সেগুলো ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারে দেশি আদার দাম ১০০ টাকা কেজি, ইন্ডিয়ান আদার (দেখতে একটু মোটা) দাম ২০০ টাকা কেজি। একই বাজারে দেশি রসুনের দাম ১০০ টাকা আর চায়না রসুন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ওই বাজারে পেঁয়াজ (বড়) ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
বাজারে সয়াবিন তেল দাম কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বোতলের গায়ের চেয়ে কোথাও কোথাও ১০-২০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ দোকানেই সয়াবিন তেল নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বড় দোকানগুলোতে ৫ লিটারের বোতল মিলছে। সেখানেও ৫০ টাকার মতো দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। আর বিক্রেতাদের দাবি, গায়ের দামের চেয়ে বেশি কেনায় বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে।
আলু-পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নিয়াজ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আলুর দাম গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ২০ টাকা কেজি। মাঝখানে আমরা ছোট আলুটা (বাছার পর) ১৫ টাকা কেজিও বিক্রি করেছি। তবে আলুর দাম রোজার পর বাড়তে পারে। পেঁয়াজ আমদানি কম। তার পরও দাম ৪০ টাকা কেজি। আর একটু খারাপ মানের পেঁয়াজের দাম ৩০-৩৫ টাকা কেজি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশি রসুন মাত্র ১০০ টাকা কেজি। আর চায়না রসুন ২০০ টাকা কেজি। গতবছর এই সময় চায়না রসুনের দাম ছিল ২৪০-২৬০ টাকা কেজি। আদা পুরনোটা ১০০ টাকা কেজি আর নতুনটা ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।’
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, মিরপুর-১ শাহ আলী মার্কেট ও মিরপুর-৬ নম্বর কাঁচা বাজারেও আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম একই দেখা গেছে।
২০২৪ সালের চিত্র
প্রকাশিত সংবাদে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৭০-৮০ টাকা কেজি। এমনকি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের দামও ছিল ৭০ টাকা কেজি। চায়না রসুনের দাম ছিল ২৪০-২৬০ টাকা কেজি। দেশি রসুন বিক্রি হতো ১৫০-১৬০ টাকায়। এ ছাড়া, ইন্ডিয়ান আদার দাম ছিল ২৫০ টাকা। আর দেশি আদা বিক্রি হতো ১৫০-১৬০ টাকায়। সয়াবিন তেল ছিল ২১০-২২০ টাকা লিটার। দাম বেশি হলেও গত রোজায় তেলের সংকট ছিল না। এবারেও সংকট নেই। তবে বাজার সিন্ডিকেটদের কারণে কৃত্রিম সংকট রয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
বিদেশি ফল
মিরপুর-১ শাহ আলী বাজারে প্রচুর বিদেশি ফল বিক্রি হতে দেখা যায়। সবুজ আঙ্গুর ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে কালো আঙ্গুরের কেজি ৫০০ টাকা। আপেল (ফুজি) ৩২০ টাকা কেজি এবং কাশ্মিরী আপেল ৩৫০ টাকা বিক্রি হতে দেখা যায়। সবুজ আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায় । মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা আর বড় কমলার কেজি ৩২০ টাকা। নাশপাতি ৩৮০ টাকা কেজি। আনার বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়।
দেশি ফল
পেয়ারা, বড়ই, আনারস গতবছরের চেয়ে অনেক কম দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ভালো মানের পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। আর বড়ই বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে। আনারস ছোট-বড় মিলিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।
২০২৪ সালের চিত্র
প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত রমজানে পেয়ারা বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকা এমনকি কোথাও কোথাও ১৪০ টাকাও বিক্রি হয়েছে। বড়ই মান ভেদে ১০০-১৫০ টাকা আর আনারস ৫০ থেকে ৮০ টাকায়।
প্রোটিন জাতীয় খাবার ডিম, মাছ, মুরগি, খাসি ও গরু
প্রোটিন জাতীয় খাবার ডিমের দাম মোটামুটি হাতের নাগালে রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ১২০-১২৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে ডিম। মাছের দাম রোজা শুরুর আগে যেমন ছিল প্রায় তেমনই রয়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ১৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগী। কর্ক ২৫০-২৭০ টাকা আর দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস আগের দামেই ১০০০-১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর গরুর মাংস বাজার ভেদে ৭৭০-৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
২০২৪ সালের চিত্র
২০২৪ সালে রোজায় গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৮০০-৮৫০ টাকা কেজি। যা গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে। সে সময় সাধারণ মানুষ যাতে কম দামে মাংস কিনে খেতে পারে সেজন্য শাহজাহানপুরে খলিল গোসত বিতানে ৬০০ টাকাও মাংস বিক্রি করা হয়। তবে তিনি সেই দাম বেশি দিন রাখতে পারেননি। প্রাণিজ সম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকেও ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে। এরপরেও বাজারে মাংসের দামে পরিবর্তন আসেনি। ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২১০ টাকা ২৪০ টাকা কেজি। আর কর্ক ছিল ৩০০ টাকা কেজি। এ ছাড়া দেশি মুরগি ৪৫০-৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম