Monday 03 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাই বিপ্লবের নারী নেতৃত্বরা কে কোথায়?

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ মার্চ ২০২৫ ২২:৪৭ | আপডেট: ৪ মার্চ ২০২৫ ০১:৪১

‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে রোকেয়া হলের মেয়েরা প্রথম বের হয়ে এসেছিল। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ‘‘যখন স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনা আমাদের উদ্দেশে ‘রাজাকার’ শব্দটা উচ্চারণ করলেন, সেদিন কিন্তু রোকেয়া হল থেকে সবার আগে সবচেয়ে বড় মিছিল নিয়ে আমরা- মানে নারীরা বের হয়েছিলাম। মেয়েদের হল গেইট ১০টায় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেদিনের দৃশ্যটা ছিল অন্যরকম। হল গেইটের তালা ভেঙে বেড়িয়ে আসে মেয়েরা। হাঁড়ি, পাতিল, চামচসহ যে যা পেয়েছে তা নিয়ে যোগ দেয় মিছিলে। স্লোগান ছিল ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’। সুতরাং এই জুলাই বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’’- কথাগুলো বলছিলেন, জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া মনিরা শারমিন। বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি।

বিজ্ঞাপন

জুলাই বিপ্লবে যখন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ, তখন নারীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করেন। নারীরা একদিকে যেমন রাজপথে নেমে আসেন, তেমনি তারা সামাজিক যোগাাযোগমাধ্যমেও ফ্যাসিবাদবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে আন্দোলনকে জোরদার করেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাড়া করার দুঃসাহসী কাজটিও প্রথম করে দেখিয়েছে রোকেয়া হলের মেয়েরা। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নয়; সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মেয়েরা, মায়েরা অদম্য শক্তি নিয়ে লড়াই করেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধা সব বয়সী নারীরা, কেউ বাদ ছিল না। জুলাই আন্দোলনে নারীদের এ সাহসী ভূমিকা আমাদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

বিজ্ঞাপন

জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া মনিরা শারমিন

মনিরা শারমিন বলেন, ‘সেদিন আসলে আমরা কেউ নিজেদের নারী পরিচয়ে লড়াইয়ে নামিনি। আমরা নাগরিক হয়েই লড়াইয়ে নেমেছি। সেদিন আমরা সাহস নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিলাম। আমাদের প্রথম দাবি ছিল ‘কোটা না মেধা’। কিন্তু শুধু মাত্র মেধার জন্যই আমাদের লড়াইটা ছিল না। এটা হয়েছিল আমাদের মর্যাদার লড়াই। শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্কের লড়াই। একজন রাষ্ট্র প্রধান কোনোভাবেই নাগরিককে অমর্যাদা করতে পারেন না।‘

কিন্তু তবু কথা থেকে যায়। সেদিনের এমন হাজারো উপস্থিত নারী নেতৃরা এখন কোথায়? কেনো সবাইকে পাওয়া যাচ্ছে না এখন সম্মুখমুখে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আমি সেদিন অবাক দৃষ্টিতে দেখেছি, আমাদের সাহসী মেয়েরা আন্দোলন করতে করতে বের হয়ে আসছে। প্রথম কিন্তু এই মেয়েরাই সেদিন এই রাজাকারবিরোধী আন্দোলন করেছিল। পরে সেটা আরও বড় আকার ধারণ করে। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারাদেশেই জুলাই গণঅভ্যূত্থানের আমাদের নারীদের ভূমিকা ছিল দেখার মতো। কিন্তু তাদের আন্দোলন সফল হওয়ার পর, সেই সব নারীদের আমরা দেখছি না। তারা কোথায় হারিয়ে গেল?’

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক

এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরা শারমিন বলেন, ‘আমরা মাত্র দল গঠন করেছি। আমাদের অনেক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য রয়েছে। খুব দ্রুতই হয়তো সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা সেদিনের প্রতিটি বীর নারীদের খুঁজে বের করে একত্রিত করব। সেই তালিকায় শুধু নারী সমন্বয়করাই থাকবেন না, যেই নারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের আন্দোলনে খিচুড়ি রান্না করে এনেছিলেন, যে মা আমাদের জন্য পানি বহন করে এনেছিলেন তাদের সবাকেই আমরা খুঁজে বের করব।’

মনিরা শারমিন এটাও বলেন, ‘আমাদের দলটি কিন্তু সমতার ভিত্তিতেই গঠন হয়েছে। সমতার মর্যাদা দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘আমরা আমাদের সংগঠন ‘নারীপক্ষ’ থেকে কিছু নারী সমন্বয়কদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। তখন অনেকেই বলেছেন, তাদের বলা হয়েছে, আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। এখন আপনারা আপনাদের লেখাপড়ায় মন দিন। নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে, সেটা বের করা দরকার।’

শুধু নেতৃত্বেই নয়, জুলাই বিপ্লবে জীবন দিয়েছেন অনেক নারী। সদ্য মা হওয়া ২০ বছরের সুমাইয়া আক্তার, কিশোরী নাঈমা সুলতানা (১৫), শিশু রিয়া গোপ (৬), তরুণী নাছিমা আক্তার (২৪) ও গৃহকর্মী মোসাম্মৎ লিজা আক্তার (১৯) এর মৃত্যু হয়েছে। দেশ তাদের ভূলবে না। কিন্তু যথাযথ মর্যাদাটাই এখন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সারাবাংলা/এফএন/এইচআই

জুলাই বিপ্লব নারী নেতৃত্ব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর