Tuesday 04 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারীদের বিচারসহ ১১ দাবি ঢাবি সাদা দলের

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
৪ মার্চ ২০২৫ ১৩:৩৫ | আপডেট: ৪ মার্চ ২০২৫ ১৪:২৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে সাদা দলের স্মারকলিপি প্রদান

ঢাবি: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিতকরণ, খাবারের মান বৃদ্ধি ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা, আবাসন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণসহ শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১১টি দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে সাদা দলের নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন- ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম এবং অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও স্যার পি. জে. হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ এম এ কাউসার।

স্মারকলিপিতে সাদা দল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস, উচ্চশিক্ষার প্রসার, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং সর্বোপরি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্তারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান অপরিসীম। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯ এর গনঅভ্যুথান, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও ২৪ এর কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী হাসিনা বিরোধী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষার্থীবৃন্দ অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, সমাজ তথা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির সাথে সাথে তুলনামূলকভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের পাঠ-পঠন যেমন আধুনিক হয়নি, তেমনি এর অবকাঠামোরও সময়োপযোগী উন্নয়ন সাধিত হয়নি। এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের জন্য আবসন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের জন্য সাদা দলের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে-

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৪টি এবং মেয়েদের জন্য ৫টি আবাসিক হল এবং ৪টি হোস্টেল রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর চাহিদার তুলনায় হলগুলোতে আবাসন সুবিধা অপ্রতুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বাসা নিয়ে থাকা সম্ভব নয় বিধায় তারা হলগুলোতে থাকতে চায়। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের আর্থিক অসুবিধা ছাড়াও নিরাপত্তাজনিত কারণে হলে থাকা জরুরি। এজন্যই বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার থেকে বেশি শিক্ষার্থী বসবাস করে। অনেক হলের অবস্থা জরাজীর্ণ হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে নতুন হল নির্মাণ এবং পুরাতন ও জরাজীর্ণ হলগুলোকে দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে ‘একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি স্বতন্ত্র বেড (One Student-One Bed) নিশ্চিত করা।
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর খাবার মানসম্পন্ন নয়। শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ক্যালোরি চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হলগুলোতে খাবারের মান বৃদ্ধি করতে হবে। বিশুদ্ধ সুপেয় পানির চাহিদা পূরণে প্রতিটি হলে পর্যাপ্ত সংখ্যক ইলেক্ট্রিক ফিল্টারের ব্যবস্থা করা।
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনসমূহের অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ এবং এর আসবাবপত্রগুলো সেকেলে এবং অনেকক্ষেত্রে জরাজীর্ণ। এসব শ্রেণিকক্ষে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ গ্রহণ কষ্টকর। মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শ্রেণিকক্ষগুলোর অবকাঠামো সংস্কার ও উন্নয়ন জরুরি। তাছাড়া শিক্ষকদের গতানুগতিক পাঠদানের পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সময়ের দাবি। এ দাবি পূরণে শ্রেণিক্ষসমূহে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করা।
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ অন্যান্য গ্রন্থাগারের অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক বই ও জার্নাল সংখ্যা বৃদ্ধি, অনলাইন রিসোর্সগুলোর এক্সেস আরও সহজলভ্য করা। শিক্ষার্থীদের নিবিড় জ্ঞান পরিচর্যা, গবেষণা ও সৃষ্টিশীলতার বিকাশ নিশ্চিত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ টিউশনিসহ অন্যান্য কাজ করে তাদের ব্যয় নির্বাহ করেন। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ও গবেষণায় পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। এটি তাদের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকেও নষ্ট করে। তাই অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইন্সটিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণা সহযোগী ও অন্যান্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ তৈরি করা জরুরি। এসব কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সিং এবং রিমোটজব সেন্টার স্থাপন করা।
  • পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন ভিত্তিক বৃত্তির ব্যবস্থা করা।
  • সামাজিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে তাদের শিক্ষাজীবন পরিচালনা করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সুবিধা সম্প্রসারণ করতে হবে। বাস সার্ভিসের সময়সূচি বৃদ্ধি করে রাত ৮ টা পর্যন্ত করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় সকল কাজ শেষ করে নিরাপদে তাদের। গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।

সারাবাংলা/এআইএন/এনজে

ঢা‌বি দাবি সাদা দল স্মারকলিপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর