চট্টগ্রামে সয়াবিন তেলের দাম বেঁধে দিলেন মেয়র-ডিসি
৪ মার্চ ২০২৫ ১৭:৩১ | আপডেট: ৪ মার্চ ২০২৫ ২০:৩৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে খোলা সয়াবিন তেল খুচরা পর্যায়ে ১৬০ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ভোজ্যতেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যেগে এ মতবিনিময় আয়োজন করা হয়।
সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় খোলা সয়াবিন তেলের আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার (৫ মার্চ) থেকে চলতি বছরের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভোজ্যতেলের আমদানিকারকরা পাইকারি ব্যবসায়ী বা ডিলারদের কাছে তেল বিক্রি করবেন ১৫৩ টাকায়। ডিলাররা সেটা খুচরা ব্যবসায়ীদের বিক্রি করবেন ১৫৫ টাকায়। আর বাজারে সেটা খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করবেন সর্ব্বোচ্চ ১৬০ টাকায়।
সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে নগরীর বৃহত্তম পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। পরিদর্শনে গিয়ে তারা খাতুনগঞ্জ বাজারে বোতলের সয়াবিন তেলের দেখা পাননি।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, বাজারে বোতলের সয়াবিন তেল উধাও হওয়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের হাত আছে। ব্যবসায়ীরা তেল সরিয়ে রেখেছেন।
এর পর তেলের উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের মঙ্গলবার বৈঠকে ডাকেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাসে দেশের বড় দুটি শিল্পগ্রুপ (টিকে ও সিটি গ্রুপ) বাজারে তাদের বোতলের সয়াবিন তেল সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারেননি। তাছাড়া এস আলমের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিপণন বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বাজারে বোতলের সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. শাহেদ বলেন, ‘বাজারে দুটি বড় শিল্পগ্রুপ এখন তাদের পণ্য বিপণন করছে না। বোতলের তেলের ক্যাপাসিটি সবার নেই। আমরা যে খোলা তেল বাজারে বিক্রি করি সেগুলো অনেকে নিয়ে নিজেদের মতো করে বিপণন করে। এরপর বিভিন্ন ব্র্যান্ড দিয়ে তারা সেগুলোও বাজারে ছাড়ে। কিন্তু রমজান আসলেই বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মনিটরিংয়ের কারণে তারা সেটা বন্ধ রাখে। তাই সংকট দেখা দেয়।’
‘এছাড়া গত এক মাস ধরে টিকে গ্রুপ তার পণ্য ডেলিভারি করতে পারেনি। সিটি গ্রুপও পারেনি। এ জন্য আমাদের বাজারে একটি অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এজন্য খোলা তেলের দাম বিচ্ছিন্নভাবে একটু বেড়েছে। আমরা জানি দাম বাড়লে চাহিদা কমে। কিন্তু আমাদের দেশে দাম বাড়লে চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায় না।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা শেষে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দোকানগুলোতে আমরা একটি অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছিলাম। দোকান থেকে ভোজ্যতেল উধাও হয়ে গেছে। এখানে যারা আমদানিকারক, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকারের প্রতিনিধি আছেন, সবার সম্মতিক্রমে আমরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এখানে আমদানিকারক সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিনিধিরাও আছেন। এ সিদ্ধান্ত কিন্তু সবার জন্য বলবৎ থাকবে।’
‘আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে তেল বিক্রি করবে ১৫৩ টাকায়। যারা খাতুগঞ্জের ডিলার তারা বিক্রি করবেন ১৫৫ টাকায়। আর বাইরে যেটা বাজারে খুচরায় বিক্রি হবে সেটা সর্ব্বোচ্চ ১৬০ টাকা। এর বাইরে যদি বেশি দামে কেউ বিক্রি করে তাহলে সর্ব্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারে আমাদের টিম থাকবে। সাধারণ মানুষকে সুবিধা দেয়ার জন্য যেটা যেটা করা দরকার সেটা অবশ্যই আমাদের করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ আজ খুব অসহায়। আমরা যে মৌলিক অধিকারগুলোর কথা বলি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এসব থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। চারপাশে যে অস্থিরতা সেটা আমাদের কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের সভার মধ্যে আজ তেলের যে দাম নির্ধারণ করা হলো, সেটা পুরো চট্টগ্রাম জেলার জন্য প্রযোজ্য। আজ এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কেউ যদি না মানে বা নিজেদের মতো দাম নির্ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘খোলা বাজারে সয়াবিন তেল সর্ব্বোচ্চ ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে। তবে কেউ চাইলে এটার নিচেও বিক্রি করতে পারেন। এটা রমজান মাস পর্যন্ত চলবে। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। এ সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো ব্যবসায়ী নিজের ইচ্ছে মতো দামে তেল বিক্রি করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এখানে টিকে গ্রুপ আছে। তারা অনেকটা ছাড় দিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তারা ১৫৩ টাকায় পাইকারি বাজারে তেল ছাড়বেন। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা ১৫৫ টাকায় খুচরা ব্যবস্যয়ীদের কাছে বিক্রি করবেন। যেটা ভোক্তার কাছে ১৬০ টাকায় বিক্রি করবেন তারা।’
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম