এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি: হিরু-সাদিয়ার ১৯ কোটি টাকা জরিমানা
৪ মার্চ ২০২৫ ১৮:৫৪ | আপডেট: ৪ মার্চ ২০২৫ ২০:৩৯
ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে সমবায় অধিদফতরে উপনিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর বিরুদ্ধে। এ কারসাজিতে তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ। তদন্তে শেয়ার কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আবুল খায়ের হিরু, তার স্ত্রী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২০২০ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যোগসাজোসের মাধ্যমে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। কোম্পানিরর শেয়ার কারসাজিতে হিরু, তার স্ত্রী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান একাধিক বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খুলে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন- বলে বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির দায়ে সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এর ক্ষমতাবলে মো. আবুল খায়েরকে ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এদিকে সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই) (২) ও সেকশন ১৭(ই) (৫) এর ক্ষমতাবলে ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই) (২), সেকশন ১৭(ই) (৩) ও সেকশন ১৭(ই) (৫) এর ক্ষমতাবলে আবুল খায়ের স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে অভিযুক্তদের মোট ১৯ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি : এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি করে সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ কাজের মূলহোতা ছিলেন হিরু নিজেই। আর কারসাজিতে সহযোগী হিসেবে ছিলেন- হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও তার সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ। এর আগে ডজনখানেক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার দায়ে হিরু ও তার সহযোগীদের একাধিকবার বড় অংকের জরিমানা করেছে বিএসইসি। ৩১তম বিসিএসের (সমবায়) কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরু দশ বছর আগেও বিনিয়োগকারীদের কাছে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু পাঁচ বছর আগে আলাদিনের চেরাগ হয়ে হাজির হন পুঁজিবাজারের আলোচিত ও সমালোচিত বিনিয়োগকারী হিরু ও তার সহযোগীরা।
সম্প্রতি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস ও এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির দায়ে আবুল খায়েরকে ৫ কোটি ৬ লাখ টাকা, তার প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ও তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া হিরুর ব্যবসায়িক পার্টনার বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকেও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার কারসাজির দায়ে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম : আবুল খায়ের হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ যোগসাজস করে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার সিরিজ ট্রানজেকশন (লেনদেন) করে। কারসাজির সঙ্গে জড়িতরা ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ দশমিক ১০ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫৪ দশমিক ১০ বা ৯০ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে যায়।
কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত: অভিযুক্ত আবুল খায়ের হিরু স্বল্প সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের বিপুলসংখ্যক শেয়ার সিরিজ লেনদেন করে। এর ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিভাবে বেড়ে যায়, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যেমে তারা একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। উক্ত আইন ইচ্ছেকৃতভাবে লঙ্ঘনের ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
এদিকে ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও কাজী সাদিয়া হাসানের বিও হিসাবের মধ্যে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের বিপুলসংখ্যক শেয়ার সিরিজ লেনদেন করে। এর ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিভাবে বেড়ে যায়, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আর ডিআইটি কো-অপারেটিভ স্বল্প সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার সিরিজ লেনদেন করে, যার ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিভাবে বেড়ে যায়, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রতিষ্ঠানটি একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/এমপি