রাঙ্গামাটিতে বাঘ সদৃশ প্রাণির আক্রমণে যুবক আহত, বিশেষজ্ঞরা বলছেন লেপার্ড
৪ মার্চ ২০২৫ ২৩:২২ | আপডেট: ৪ মার্চ ২০২৫ ২৩:২৭
রাঙ্গামাটি: জেলার জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় বাঘ সদৃশ এক বন্যপ্রাণীর আক্রমণে স্থানীয় এক যুবকের গুরুতর আহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাণিটি লেপার্ড হতে পারে।
গত সোমবার (৩ মার্চ) ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম ৩ নম্বর মৈদং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৌন আদাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ৩ নম্বর মৈদং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা।
জানা গেছে, আহত ব্যক্তির নাম রাঙা চোগা চাকমা (৩৫)। তিনি মৌন আদাম এলাকার মঙ্গল চন্দ্র চাকমার ছেলে।
মৌন আদামের স্থানীয় বাসিন্দা শান্তি কুমার চাকমা বলেন, ‘ভোরে রাঙা চোগা নিজের মুরগি ঘর মেরামতের জন্য বাড়ির পাশে জঙ্গল থেকে গাছ সংগ্রহ করতে গেলে সে বাঘের (বাঘ সদৃশ প্রাণী) মুখোমুখি হয়। বাঘ তার ওপর ঝাঁপিয়ে আক্রমণ করলে তার মুখের বাম পাশের এক অংশ ছিঁড়ে যায়। সেই সঙ্গে বাম কান ও চেখের একটা অংশ এবং হাতের তালু ছিঁড়ে। এ ছাড়া শরীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় জখম হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে বাঘ কামড় দিতে পারেনি; রাঙা চোগা চিৎকার করলে বাঘটি তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।‘
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি খুব দুর্গম হওয়ায় এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা খুব নাজুক। পায়ে হাঁটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই। আমরা তাকে উদ্ধার করে আমাদের গ্রাম থেকে ২ ঘণ্টা পাঁয়ে হেঁটে তাকে কাঁধে করে ফকিরাছড়া গ্রামে নিয়ে গেছি। বর্তমানে সেখানে এক স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। ক্ষত স্থানগুলো বহু সেলাই করতে হয়েছে। তবে অবস্থা খুব গুরুতর।’
বন্যপ্রাণীটি সত্যিই বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার কিনা জানতে চাইলে তিনি আহত ব্যক্তির বরাত দিয়ে বলেন, ‘রাঙা চোগা নিজেই বাঘটিকে দেখেছে বলেছে। আর আমিও নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকটা বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছি। আহত ব্যক্তি আমার মামাতো ভাই।’
৩ নম্বর মৈদং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা বলেন, ‘ বাঘের আক্রমনে রাঙা চোগা নামে স্থানীয় একজন গুরুতর আহত হয়েছে। গ্রামবাসীরা থাকে কাঁধে করে ২ ঘণ্টা পাঁয়ে হেঁটে ফকিরাছড়া এক স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়।’ বর্তমানে ওখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বাঘ বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘রাঙ্গামাটিতে যদি বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার থেকে থাকে সেক্ষেত্রে কাচালং সংরক্ষিত বনের দিকে দুই-একটি থাকতে পারে। অন্য এলাকায় থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারলে আরও ভালোভাবে জানা যেতো। তবে আমি ধারণা করছি, লেপার্ড হতে পারে। রাঙামাটিতে লেপার্ডের উপস্থিতি আছে।’
একই কথা জানালেন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুপ্রিয় চাকমাও। যিনি সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার গণনা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ড. সুপ্রিয় চাকমা বলেন, ‘বন্যপ্রাণীর আক্রমণে আহত ব্যক্তি সুস্থ হলে উনার সাক্ষাতকার নিলে জানা যাবে কী ছিল। তবে ভারতীয় লেপার্ডও হতে পারে।’
এদিকে, রাঙ্গামাটির উপবন সংরক্ষক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেভাবে জখম করেছে এতে বোঝাই যাচ্ছে প্রাণিটি বড় ছিল। তবে প্রাণির শরীর ডোরাকাটা নাকি ছাপ ছাপ ছিল, পায়ের ছাপ দেখতে পারলে বোঝা যেতো। আমরা ধারণা করছি, এটি লেপার্ড হতে পারে।’
সারাবাংলা/এইচআই