৩ দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, রেললাইন অবরোধ
৫ মার্চ ২০২৫ ১৪:৫৯ | আপডেট: ৫ মার্চ ২০২৫ ১৭:২১
রাবি: রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণসহ তিন দাবিতে রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইতিবাচক সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
বুধবার (৫ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজার সংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এতে রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের ৩টি দাবি হলো-
- রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা
- জুলাই বিপ্লবের সকল অংশীজনদের যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
- পিএসসি, ইউজিসি সংস্কার কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো পুনর্গঠন করে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ঢাকা না বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়ো ঢাবি ভক্তি’, ‘ঢাবিবাদ নিপাত যাক, বাংলাদেশ মুক্তি পাক’, ‘সিন্ডিকেট না মুক্তি, মুক্তি মুক্তি’, ‘অবৈধ সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এফআরএম ফাহিম রেজা বলেন, ‘আমরা দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন হল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তখন তাদেরকে সাহায্য করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢলে পড়েছিল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, সাত কলেজ দুর্গ গড়ে তুলেছিল। ক্যাম্পাসকে সর্বপ্রথম ছাত্রলীগমুক্ত করেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সারা বাংলাদেশ যখন আন্দোলনে নামতে পারছিল না তখন ২৯ জুলাই এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কারফিউ ভেঙে পুরো বাংলাদেশকে আবার আন্দোলনে জাগিয়ে তোলে। বিজয় পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি এই বিপ্লবকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে তারা স্বীকার তো করেই নি বরং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যখন তাদের অধিকার বুঝে নিতে যায় তখন তাদের ওপর হামলা করা হয়। আমরা দাবি জানাচ্ছি অনতিবিলম্বে ইউজিসি, পিএসসিসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করতে হবে এবং প্রত্যেকটি অংশীজনকে তাদের পাওয়া বুঝিয়ে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, উত্তরবঙ্গকে নিয়ে আপনি কি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন? সামনে যে বাজেট পেশ করা হবে সেখানে যেন কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈষম্য করা না হয়। আমরা দেখতে পাই বিসিএস পরীক্ষায় সমান যোগ্যতা থাকার ফলেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পায় শিক্ষা ক্যাডার আর ঢাকা পায় প্রশাসন ক্যাডার। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে আহ্বান করছি, আপনারা নিজেদের অধিকারে সোচ্চার হন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিপত্যের গালে থুথু নিক্ষেপ করেন।’
অপর এক শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে মাদরাসা থেকে শুরু করে জাতীয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবাই অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি ইউজিসি, পিএসসি, সংস্কার কমিশন এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি প্রোভিসি শুধু ঢাবি থেকেই সবকিছুতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ঢাবি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে কি মেধাবী যোগ্য লোক নেই? আমাদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল পাহাড় থেকে সমতলে কোনো বৈষম্য থাকবে না। আমরা চাই সকল অংশীজন তাদের হিস্যা বুঝে পাক, সকল নাগরিক তাদের রক্তের হিসাব বুঝে পাক। আমাদের এই আন্দোলন ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আমরা সবুজ সংকেত না পাব।’
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী শফিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকা কেন্দ্রিক যে আধিপত্য আমরা সেই আধিপত্য থেকে বেরিয়ে এসে বিকেন্দ্রীকরণের বাংলাদেশ গড়তে চাই। এখানে যেমন ঢাবির অংশগ্রহণ থাকবে তেমনি রাবি, জাবি, চবি সবার সমান অংশগ্রহণ থাকবে। সামগ্রিকভাবে সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ দেশ পরিচালিত হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
বিক্ষোভ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এমপি
অবরোধ বিক্ষোভ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)