Thursday 06 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদ্যুৎ উৎপাদনে আবাসিকের গ্যাস, বাড়ছে রান্নায় ভোগান্তি

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ মার্চ ২০২৫ ২১:৫৮ | আপডেট: ৫ মার্চ ২০২৫ ২২:০৩

গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্র যাচ্ছে আবাসিকের গ্যাস। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: সকালে গ্যাস থাকে তো দুপুরে থাকে না। আবার দুপুরে থাকে তো রাতে দেখা নেই। রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় গ্যাস সংকট এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওইসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বছরের অন্য সময় এই সংকট সহ্য করা গেলেও রোজায় এই পরিস্থিতি বড় দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গ্যাস সংকটের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, চলতি রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে রাজধানীর কোথাও কোথাও দিনের একটা বড় সময় গ্যাস থাকছে না। আবার কোথাও কোথাও রাতে পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো এলাকায় আবার চাপ কম।

বিজ্ঞাপন

রাজধানী মুগধা, মান্ডা এলাকায় বছর জুড়েই গ্যাসের সংকট থাকে। এখানকার বাসিন্দারা জানান, দিনের বেলায় এই এলাকায় গ্যাস থাকে না বললেই চলে। মান্ডা এলাকার সিকদার গলির খান ভিলা’র মালিক মোখলেসুর রহমান খান সারাবাংলাকে জানান, ২০ বছর আগে তিনি যখন এখানে বাড়ি করেন তখন আশে পাশে বড় কোনো বাড়ি ছিল না। চারপাশ ছিল খোলা। তখনই লাখ লাখ টাকা খরচ করে নিজস্ব গ্যাসের লাইন নিয়েছেন তার ছয় তলা বাড়ির জন্য, যাতে কখনো জ্বালানি সংকটে না পড়েন।

তিনি বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে বাড়িতে কোনো অতিথি আপ্যায়নে ডাকি না। কারণ, দিনের বেলা গ্যাস থাকে না। রাত ১২টার পর গ্যাস আসে, আবার ভোর ৫টার দিকে চলে যায়। এটা চাকুরিজীবীদের জন্য অসহ্যকর। এ বিষয়ে কথা তিতাস অফিসে অনেকবার গিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি।’

একই কথা বলেছেন পাশের বাড়ি শাহনাজ মঞ্জিলের মালিক রাবেয়া খাতুনও। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এদিকে দিনের বেলা চুলা জ্বলে না। গ্যাস সংকটের কারণে এখানে ভাড়া ভাড়াটিয়া পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ ব্যাচেলর ও ছোট পরিবার ভাড়াটিয়া হিসেবে আসে। গ্যাস সংকটের কারণে ভাড়া কম দেখে মানুষ কষ্ট করে এদিকে থাকে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে মানিকনগর, গোলাপবাগ, জোড়পুকুর পাড় এলাকায়ও গ্যাস সংকট দীর্ঘ দিন ধরে। এখানকার বাসিন্দা গৃহিনী মারজিয়া অনু সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্য দিন তবু সহ্য করা গেছে, কিন্তু রোজা রেখে ঠিকমতো ইফতার করা না গেলে কিরকম লাগে বলুন। সকালে গ্যাস থাকে; আবার দুপুরের পর থেকে কমতে থাকে। বিকেল-সন্ধ্যার দিকে চাপ এতটা কমে আসে যে, পানি গরম করতে ঘণ্টা পার হয়। এবার রোজায় এখন পর্যন্ত ঘরে তেমন কোনো ইফতার আইটেম বানাতে পারিনি।’

গ্যাসের সংকট গোপীবাগ, টিকাটুলী, হাটখোলা, কে এম দাস লেন, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, ধূপখোলা এলাকা থেকেও পাওয়া গেছে। এদিকে বনশ্রী, মালিবাগ, আবুল হোটেল, মধ্য বাড্ডা, মিরপুরের কিছু অংশ, শেওড়াপাড়া এলাকা থেকেও গ্যাস সংকটের খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, কারও এলাকায় সকালে গ্যাস থাকে, কারও থাকে দুপুরে, আবার কারও রাতে গ্যাস চলে যায়। গ্যাস কমে যাওয়ার কারণে রোজার মধ্যে ইফতার ও রান্নায় ব্যাপক সমস্যার কথা জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।

এদিকে গ্যাস সংকটের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, চলতি রমজান ও আসছে সেচ মৌসুমকে সামনে রেখে সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে। সে কারণে আবাসিক খাতের গ্যাস কখনো কখনো বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বাসাবাড়ির গ্যাস সরবরাহে সংকট কিছুটা বেড়েছে।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, প্রথম রোজার দিনে সারাদেশে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ২ হাজার ৮৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ার কারণে গ্রিডের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হয়েছে। যেমন গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে গ্রিডের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে, সেখানে দুই দিন আগে সেই সরবরাহের পরিমাণ ৯১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। যে কারণে সংকট পড়েছে আবাসিকসহ অন্যান্য খাতে।

এ প্রসঙ্গে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাসের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ সাইদুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে শুধুমাত্র রাজধানীতে গ্যাসের চাহিদা প্রায় দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। সেখানে আমরা সরবরাহ করতে পারছি ১৫৮০ কিংবা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখানে প্রতিদিন ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এই ঘাটতির কারণে ঢাকায় গ্যাস কম পাওয়া যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘রমজান মাসে গ্যাসের চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। তারওপরে সরবরাহ কম দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে।’

এবার রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) সূত্র জানিয়েছে, খোলাবাজার থেকে শুরুতে পাঁচটি এলএনজি কার্গো কেনার পরিকল্পনা করেছিল। পরে চাহিদা বাড়তে পারে চিন্তা করে আরও একটি কার্গো কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক জ্বালানি আমদানির জন্য অর্থ বিভাগের কাছে ৮০০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, নতুন ওয়ার্ক-ওভার করা কূপ থেকে আরও ৬০ থেকে ৭০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা করছে পেট্রোবাংলা। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে যে ১৪৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৫৮টি। এই সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। যা মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪৩ শতাংশ।

উল্লেখ্য, রমজান মাসে রাজধানীতে গ্যাস সংকট থাকলেও বিদ্যুৎ সংকটের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। খবর পাওয়া যায়নি লোডশেডিংয়েরও। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খানও বলেছিলেন, এবার রমজানে বিদ্যুৎ সংকট হবে না। সেজন্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়, এলএনজি ও কয়লা আমদানি বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

আবাসিক বিদ্যুৎ ভোগান্তি রান্না

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর