Thursday 06 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৬ মার্চ ১৯৭১
সভা-সমাবেশ ও মিছিলে উত্তাল ছিল সারাদেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ মার্চ ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ৬ মার্চ ২০২৫ ০৮:২৭

৬ মার্চ ১৯৭১। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ। এদিন সারাদেশ সভা-সমাবেশ-মিছিলে ছিল উত্তাল। ঢাকায় ষষ্ঠ দিনের মতো হরতাল পালনকালে সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে আসে। শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হয়। এর পর তারই নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে বেতন দেওয়া হয়নি সেসব অফিস বেতন প্রদানের জন্য খোলা রাখা হয়।

বেলা ১১ টার দিকে সেন্ট্রাল জেলের গেট ভেঙে ৩৪১ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে সাত জন কয়েদি নিহত এবং ৩০ জন আহত হন।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দুপুরে এক বেতার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেন। ভাষণে তিনি বলেন, ‘যাই ঘটুক না কেন যদ্দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার হুকুমে রয়েছে এবং আমি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছি তদ্দিন পর্যন্ত আমি পূর্ণাঙ্গ ও নিরঙ্কুশভাবে পাকিস্তানের সংহতির নিশ্চয়তা বিধান করব।’

তখন এই খবরে সারা বাংলায় স্লোগান উঠেছে শহিদের রক্ত মাখা মিছিলে, ‘পরিষদে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। ৭ মার্চ আর একদিন বাকি। দিনটির জন্য রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা সবার।

রাজশাহীতে মিছিলকারীদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে একজন নিহত এবং ১৪ জন আহত হন। অপরদিকে খুলনায় অব্যাহত দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও গুলিবর্ষণে বহু নিহত এবং ৮৬ জন আহত হন।

প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের অব্যবহিত পরেই শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে তৎকালীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার ওয়ার্কিং কমিটির এক যুক্ত জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের আলোকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বিজ্ঞাপন

ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের পরপরই ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। রাওয়ালপিন্ডিতে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণকে স্বাগত জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার দল ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনের আগেই আলোচনার মাধ্যমে শাসনতন্ত্রের মোটামুটি একটি কাঠামো স্থির করতে চায়।

লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল নূর খান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ-শাসনের বৈধ অধিকার রয়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তারের সব বাধা অবিলম্বে দূর করতে হবে।’ প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণে পরিস্থিতি অবনতির জন্য শেখ মুজিবকে দোষারোপ করায় নূর খান দুঃখ প্রকাশ করেন।

পেশোয়ারে পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রধান খান আবদুল কাইয়ুম খান ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবানের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

পিডিপি প্রধান নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ দৌলতানা ইয়াহিয়া খানের ঘোষণাকে স্বাগত জানান। প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করেন।

এদিন ভারতের ওপর দিয়ে পাকিস্তানের বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম। এদিকে সারা দেশে প্রতিরোধ ধীরে ধীরে দানা বাঁধতে থাকে। থানায় থানায় চলতে থাকে কমিটির প্রস্তুতি।

[তথ্য সংগ্রহ: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, স্বাধীনতার দলিল, “১৯৭১ ও মুক্তিযুদ্ধ” এবং “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস” বইয়ের পাতা থেকে]

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

৬ মার্চ ১৯৭১ উত্তাল মিছিল সভা-সমাবেশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর