গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সচেতন দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান সিপিবি’র
৬ মার্চ ২০২৫ ২০:৪৮ | আপডেট: ৬ মার্চ ২০২৫ ২৩:৩৮
ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা বলেছেন, বিগত স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলমান আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে নানা শক্তি সমবেত হয়েছিল। ছাত্র-জনতা ও শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণে অভূতপূর্বক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। এ গণঅভ্যুত্থানের পর এখন নানা শক্তি তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। অন্যদিকে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসে নি। জানমালের নিরাপত্তাহীনতা চলছে। ‘মব সন্ত্রাস’, দখলদারিত্ব দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সচেতন দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
একই সঙ্গে চলতি পরিস্থিতির অবসানে অন্তত: ভোটের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়।
সিপিবি’র ৭৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাজধানীর পল্টনস্থ মুক্তি ভবনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দলের নেতারা এ আহ্বান জানান।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় বাম রাজনৈতিক ধারার প্রতি অবিচল আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে তারা বলেন, “সমাজ বিপ্লব ছাড়া শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। এর জন্য সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে সমাজ বিপ্লব সম্পন্ন করতে হবে।”
সিপিবি সভাপতি মোঃ শাহ আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারি সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, রফিকুজ্জামান লায়েক, পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
নেতারা বলেন, সিপিবি দীর্ঘদিন ধরে দেশ ও মানুষের মুক্তির আন্দোলন অগ্রসর করতে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কর্মসূচি সামনে রেখে আন্দোলন করে যাচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশে এখনো ভোটের গণতন্ত্রের স্থায়ী ধারা প্রতিষ্ঠা করা যায় নি। ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থান ও ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে গণতন্ত্র ও বৈষম্য মুক্তির কথা সামনে আসলেও, এই ধারায় দেশকে অগ্রসর করার লেশমাত্র লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনকারী শক্তি সমূহের সাথে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও এখনো পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে সংলাপে বসেনি। বরং সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ চলছে বলেই দেশবাসীর সামনে প্রতীয়মান হচ্ছে।
নেতারা বলেন এবারের আন্দোলনের মধ্যে বৈষম্য বিরোধী বক্তব্য সামনে চলে এসেছে। দেশের প্রকৃত বৈষম্য হচ্ছে ধন বৈষম্য-শ্রেণী বৈষম্য। এই বৈষম্যের অবসান ঘটানো ছাড়া দেশ ও মানুষের মুক্তি অর্জন করা যাবে না। আর এজন্যই চাই দুর্বৃত্তায়িত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন। সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন রোধে বিকল্প পথ নির্দেশনার কথা বলা হচ্ছে না।
নেতারা বলেন পুঁজিবাদী শোষণ শাসনব্যবস্থা বহাল রেখে বৈষম্যমুক্ত সমাজ করা যাবে না। এজন্যে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির উত্থান ছাড়া জনগণের মুক্তি আসবে না। এবারের গণঅভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বামপন্থার পথ ধরেই ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএস