৭ মার্চ ১৯৭১
শেখ মুজিবের ভাষণ শুনতে লাখো মানুষ জড়ো হয় রেসকোর্সে
৭ মার্চ ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ৭ মার্চ ২০২৫ ০৩:১২
ঢাকা: আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী ভাষণের স্মারক হিসেবে দিনটি অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমাবেশে দেওয়া ওই ভাষণে শেখ মুজিব বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
সেদিন লাখো মানুষের উপস্থিতিতে রেসকোর্স ময়দান ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। ময়দানজুড়ে স্লোগান গর্জে ওঠে ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’। মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’। এর পর থেকেই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
শেখ মুজিব বলেন, ‘আমি বলে দিতে চাই, আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’ তার ভাষণের সর্বশেষ দু’টি বাক্য, যা পরবর্তী সময়ে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিক-নির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়। তিনি বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ শেখ মুজিবের ভাষণে গর্জে ওঠে উত্তাল জনসমুদ্র। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারী স্লোগানের উদ্দামতায় পত্ পত্ করে ওড়ে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল-সবুজের পতাকা। লাখো শপথের বজ্রমুষ্টি উত্থিত হয় আকাশে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করার আহ্বানের অপেক্ষায় ছিল বাঙালি । শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা। তিনি যে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন, মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পরে সারাদেশে।
একাত্তরের ৭ মার্চ শেখ মুজিবের এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। তার এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে উঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত মুক্তির লক্ষ্যে।
সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম