Monday 31 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রমজানে স্থিতিশীল কাঁচাবাজার, তেল নিয়ে চলছে ‘তেলেসমাতি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ মার্চ ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ৭ মার্চ ২০২৫ ১০:২৪

রমজানে স্থিতিশীল আছে কাঁচাবাজার। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বাজারে শাকসবজি, নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিপণ্য, মাছ-মাংসের দাম স্থিতিশীল আছে। রমজানের শুরুতে লেবু ও শসার দাম কিছুটা বাড়লেও এখন কমে এসেছে। তবে বোতলের সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট ও দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। এমনকি খোদ সিটি মেয়র, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা মাঠে নেমেও তেল নিয়ে ‘তেলেসমাতি’ বন্ধ করতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার ও চৌমুহনীর সিডিএ কর্ণফুলী মার্কেট এবং বিভিন্ন ভাসমান দোকান ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

রমজানে চাহিদা বেশি এমন ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া- বছরের পর বছর ধরে এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এবার সেই রেকর্ডে হেরফের হয়েছে। যেমন- শাকসবজির দাম শুরুতে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও রমজানের প্রথম সপ্তাহ পার হওয়ার মুহূর্তে দেখা গেছে, বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে অন্তত ৮-১০ টাকা করে কমেছে। এদিকে চালের দাম রমজানের আগে থেকে অন্তত তিনমাস ধরে চড়া। সেটা রমজান শুরুর পরও কমেনি, আবার বাড়েওনি।

বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছবি: সারাবাংলা

বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছবি: সারাবাংলা

রমজানের শুরুতে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও লেবুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে সেই লেবুর ডজন আকারভেদে ১২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গেল সপ্তাহে বাজারে শসা প্রতিকেজি ৫০ টাকা ও ক্ষিরা ৬০-৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবারের বাজারে শসা মানভেদে প্রতিকেজি ২০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা কমছে। তবে সরবরাহ এখনো প্রচুর। শীতকালীন সবজির মধ্যে বাজারে প্রতিকেজি টমেটো ১০ থেকে ২০ টাকা, দেশি গাজর ৪০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৪০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আলু প্রতিকেজি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে, তবে দাম বেশি। বাজারে করলা ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁয়াজকলি ৩০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা কমছে। তবে সরবরাহ এখনো প্রচুর। ছবি: সারাবাংলা

বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা কমছে। তবে সরবরাহ এখনো প্রচুর। ছবি: সারাবাংলা

এদিকে চট্টগ্রামের বাজারে অধিকাংশ মুদি দোকানেই খোলা সয়াবিন তেল মিলছে না। বোতলের সয়াবিন তেলও চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছেন না ক্রেতারা। কোথাও কোথাও মিললেও নির্ধারিত দরের চেয়ে দাম নিচ্ছে বেশি। বোতলের সয়াবিন তেলের সন্ধানে চলতি সপ্তাহে মাঠে নেমেছিলেন চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এরপর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দর ১৬০ টাকা নির্ধারণ করেছিলেন তারা। কিন্তু সয়াবিন তেলের বোতলের কম সরবরাহ ও বাড়তি দরের সংকট কাটেনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে বিভিন্ন দোকানে সয়াবিন তেলের পরিস্থিতি দেখতে যান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের টিম। তারা কয়েকটি দোকান ঘুরে সয়াবিন তেল মজুত করে রাখা ও বাড়তি দামে বিক্রির প্রমাণ পান।

অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু দোকানে সয়াবিন তেলের বোতল থাকলেও সেগুলো প্রদর্শন না করে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তারা নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন বাড়তি দামে। আর কিছু দোকানে তেল থাকলেও প্রতি লিটার ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা করে বিক্রি করছে। অথচ চট্টগ্রামে দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬০ টাকা। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা জরিমানা করেছি।’

বাজারে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৯৫০-৯৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই লিটার বোতল ৩৪৮ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, পাম সুপার ১৬০ টাকা, সরিষার তেল খোলা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়।

বাজারে অন্যান্য মুদিপণ্যের মধ্যে ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১২০ টাকা, মাষকলাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১২০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এ ছাড়া, পেঁয়াজের দাম স্বস্তির পর্যায়ে আছে। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর চায়না রসুন প্রতি কেজি ২৩০ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা এবং চায়না আদা ২০০ থেকে ২২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হচ্ছে।

রুই মাছ ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে ৪৪০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছবি: সারাবাংলা

রুই মাছ ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে ৪৪০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছবি: সারাবাংলা

চালের মধ্যে প্রতিকেজি নাজিরশাইল হাফসিদ্ধ মানভেদে ৮৫ ও ৯০ টাকা, মিনিকেট সরু আতপ চাল মানভেদে ৫৮, ৬৫ ও ৭৪ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ৯০ টাকায়, ব্রি-২৮ চাল মানভেদে ৮০ ও ৮৬ টাকা, স্বর্ণা, চায়না ও ইরি মানের মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনিগুঁড়া প্রতিকেজি ১৪০ টাকা এবং কিছুটা উন্নতমানের চিনিগুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের মধ্যে রুই মাছ ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা মাছ ৩০০ থেকে ৪৪০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, ছোট-বড় চিংড়ি মাছ ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, চাষের ও দেশি কৈ মাছ ২০০ থেকে ১০০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চাষের ও দেশি শিং মাছ ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা, মেনি মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিতল মাছ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, সরপুঁটি মাছ ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৪৫০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

বাজারে খামারের ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৮০ থেকে ২৮৫ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। হাঁড়সহ গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, কলিজা ৫৫০ টাকা ও হাঁড়বিহীন ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির মাংস আগের মতোই ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

অপরির্তিত রয়েছে ডিমের বাজার। বাজারে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০ টাকা, সাদা ডিম ১২০ টাকা আর দেশি মুরগির ডিম ২১০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

কাঁচাবাজার তেল তেলেসমাতি রমজান সয়াবিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর