ঢাকা: নারীর ওপর সহিংসতা, শোষণ-নির্যাতন বন্ধ এবং নিপীড়কদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। দলটির নেতারা নারী-পুরুষের সমতা গড়তে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
শুক্রবার (৭ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান সিপিবির সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
বিবৃতিতে সিপিবির সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীরা এবং প্রগতিশীল সমাজ বর্তমানে এক ভয়াবহ দুঃসময় পার করছে। নারী বিদ্বেষ, নারীর প্রতি সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। ‘২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর এক উগ্রগোষ্ঠী গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করতে নানা ধরনের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো নারীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো, নারীর ওপর সহিংসতা ও আক্রমণ, যা গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি।
দলটির নেতারা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক, শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলাম, তাকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। সমাজে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং সকল কাজে সমান সুযোগ ও সমান মজুরি ছাড়া দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যাবে না।’
সিপিবির নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়ন, পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নারীসমাজকে সংগ্রাম করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে, শোষণ-নিপীড়ন বাড়তেই থাকে এবং এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী সমাজ। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরেও বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, খুন-ধর্ষণ ও শিশু হত্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই দেশের, কোনো না কোনো প্রান্তে নারী ও শিশুরা খুন-ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
সিপিবির নেতারা বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর হাজার বছরের লড়াই সংগ্রামের এক অর্জন, এ দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। নিউইয়র্কের সূতাকলের নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা ও অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন সরকারের গুণ্ডাবাহিনীর আক্রমণের মধ্য দিয়ে দমন করতে চায়। ইতিহাসের সেই লড়াইয়ের ক্ষণকে স্মরণ করে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী কমরেড ক্লারা জেটকিন নারী আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে এ দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শুরুতে শুধুমাত্র সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট-বামপন্থিরা দিবসটি পালন করলেও, এখন পৃথিবী জুড়ে নানা আঙ্গিকে নারী দিবস পালন করা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, নারী দিবসের শতবর্ষ পরে এসেও নারীর সামগ্রিক মুক্তি অর্জিত হয়নি। পুঁজিবাদ নারীকে পণ্যে পরিণত করে তার মুনাফা অর্জনের জন্য নারী অধস্তনতা, নারী নির্যাতন এবং বৈষম্যের সকল উপাদানকে টিকিয়ে রেখেছে। তাই কাজেই নারীমুক্তির মূল শত্রু পুঁজিবাদকে রুখে দেওয়ার মধ্য দিয়ে নারীমুক্তির লড়াইকে বেগবান করতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুঁজিবাদ নারীদিবসের তাৎপর্যকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করে এবং নারী দিবসকে সংগ্রামের ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি সাধারণ আনন্দ উদযাপনের বিষয়ে পরিণত করেছে। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। নারীমুক্তির লড়াই একটি রাজনৈতিক লড়াই। নারীমুক্তির লড়াই এবং সমাজ পরিবর্তনের লড়াই একইসঙ্গে অগ্রসর করতে হবে।